দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত হয়েছে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মিনার দিনাজপুর গোর-এ শহীদ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ। ঈদের নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
Advertisement
এছাড়া নামাজে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য জেলা পুলিশ প্রশাসন নিয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে আবহাওয়া খারাপ হলে বড় ময়দানস্থ মসজিদ ও আশপাশের এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে ২০১৫ সালে এই ঈদগাহের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণের প্রায় দেড় বছরে এটি নামাজের জন্য পুরো প্রস্তুত করা হয়। উপমহাদেশে এর তুলনা করার মতো অন্য কোনো ঈদগাহ মাঠ নেই। এটি একমাত্র ঈদগাহ।
৫২ গম্বুজের দুই পাশে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। এসব মিনার আর গম্বুজের প্রস্থ হলো ৫১৬ ফুট। দেশের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক গোড়-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঈদগাহ মিনার।
Advertisement
প্রত্যেকটি গম্বুজে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দেয়া হয়েছে। মিনার দুটির উচ্চতা ৫০ ফিট, যে মেহেরাবে খতিব বয়ান করবেন সেটির উচ্চতা ৫০ ফুট। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। গেট দুটির উচ্চতা ৩০ ফুট। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মিনারের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠ প্রস্তুতির কাজ শেষ। ইতোমধ্যে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে চারটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার। মাঠের আরেকটি অংশে ঘেরা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের গ্যারেজ। স্টেশন ক্লাব, সার্কিট হাউজ, শিশু একাডেমি ও জেলা গণগ্রন্থাগারেও যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, উপমহাদেশে এত বড় মিনার সংবলিত ঈদগাহ মাঠ একটিও নেই। এ বছর প্রায় ৭ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে যা শোলাকিয়ার চেয়ে অনেক বড়। তবে ঈদুল ফিতরের প্রধান নামাজে দেশের সর্ববৃহৎ ছয় লাখ মুসল্লি একসঙ্গে এই মাঠে নামাজ আদায় করেছেন। লোক সমাগম বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, ৫২ গম্বুজের এই ঈদগাহ মাঠে এ বছর ঈদুল আজহার প্রধান জামাতে একসঙ্গে সাত লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করবেন। এই ঈদগাহ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। দিনাজপুরবাসী আশা করছে, এবার থেকে ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মাঠে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দিনাজপুর সদর আসনের এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এই ঈদ জামাতের উদ্যোগ নিয়েছেন।
Advertisement
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব শামসুল ইসলাম কাশেমী। পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা প্রশাসন ও দিনাজপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যদি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হয় তাহলে বড়মাঠের পাশে মসজিদসহ আশপাশের এলাকার মসজিদগুলোতে একযোগে নামাজ আদায় করা হবে।
পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম বলেন, সাত লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের প্রধান জামাতকে কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সাদা পোশাকে ঈদগাহ প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালন করবেন। র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্রিয় থাকবেন। মাঠের নিরাপত্তার জন্য নির্মিত হয়েছে চারটি বিশাল পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
এমদাদুল হক মিলন/এএম/এমএস