>> ঢাকা উত্তরে আনুমানিক ৩ লক্ষাধিক পশু কোরবানি হবে>> জবাইখানায় পশু আনলে খবচের ২৫% বহন করবে ডিএনসিসি>> কোরবানির সুব্যবস্থা ২৭৩ জায়গায়, আরও ৪০০ স্থানে পশু জবাই >> ডিএসসিসি এলাকার বর্জ্য ২৪ ঘণ্টা অপসারণ>> বর্জ্য অপসারণে থাকছেন ডিএসিসির ৫২৪১ পরিচ্ছন্নতাকর্মী>> অতিরিক্ত থাকবেন আরও ১২৫২ পরিচ্ছন্নতাকর্মী
Advertisement
কোরবানির বর্জ্য গত বছর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। যদিও অলিগলি-ভিতরের রাস্তা, পাড়া-মহল্লার সব স্থানে কোরবানির বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা হয়নি বলে সে সময় অভিযোগ করেছিলেন বিভিন্ন এলাকাবাসী।
গত বছর কোরবানি পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় কোরবানির প্রথম দিনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কোরবানির বর্জ্য সব ওয়ার্ড থেকে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে অপসারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকেও কোরবানির পরদিন জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য ৯০ ভাগ অপসারণ করা হয়েছে।
Advertisement
কিন্তু দুই সিটি কর্পোরেশনের এমন দাবি মানতে নারাজ রাজধানীবাসী। তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের দাবি করলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়, অলি-গলি, ভিতরের রাস্তায় কোরবানির বর্জ্য ২৪ ঘণ্টায় তারা অপসারণ করতে পারেনি।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এ বছর কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা দুটি।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণ পদক্ষেপ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত নতুন এলাকাসহ আনুমানিক ৩ লক্ষাধিক পশু কোরবানি দেয়া হবে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬৮ হাজার বেশি। কোরবানির পশু জবাই করার জন্য এ বছর মহাখালী পশু জবাইখানাসহ ২৭৩টি স্থানে কোরবানির সুব্যবস্থা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এ ছাড়া কোরবানি করা যাবে এমন ৪০০টি স্থান চিহ্নিত করা আছে।
তবে রাস্তায় কিংবা ড্রেনের পাশে কোরবানি না করার জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোরবানির জন্য সর্বমোট ১০০ জন ইমাম ও ২০০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
Advertisement
এ বছর প্রথমবারের মতো মহাখালী পশু জবাইখানায় যারা কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তাদের পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুত বাবদ ২৫% খরচ বহন করবে ডিএনসিসি। তাছাড়া ডিএনসিসির গাড়িতে মাংস বাড়ি পৌঁছে দেয়ারও ব্যবস্থা করা হবে। পবিত্র ঈদুল আজহায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকি ও দ্রুত অপসারণ কাজের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ২ হাজার ৪০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ৪৩৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করবেন। এ ছাড়া আরও ১১০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং বাসা-বাড়ি থেকে ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য পিডাব্লিউসিএসপিএর প্রায় ৪ হাজার ৫০০ শ্রমিক নিয়োজিত থাকবেন।
ঈদের দিন থেকে জবাই করা পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিক অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাট দ্রুত পরিষ্কারের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বর্জ্যবাহী ট্রাক, ভারী যন্ত্রপাতি, ওয়াটার বাউজারের পাশাপাশি আউটসোর্সিং থেকে অতিরিক্ত গাড়ি নিয়োজিত করা হবে। ঈদ উপলক্ষে বর্জ্য পরিবহন সক্ষমতা কমপক্ষে ১০ হাজার টনে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঈদের আগেরদিন থেকে ঈদের পরবর্তী ২ দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক ও খোলা ট্রাক ১৬৯টি, ভারী যান-যন্ত্রপাতি ২৮টি, পানির গাড়ি ১১টি, বেসরকারি ৮২টি এবং ভাড়ায় ১৪৮টি পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৪৩৮টি গাড়ি নিয়োজিত থাকবে।
কোরবানির পশুর বর্জ্যে যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে জবাইয়ের স্থানে ১০টি ওয়াটার বাউজার দিয়ে তরল জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রের ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বর্জ্য ব্যাগ ৫ লাখ ৮০ হাজার, ব্লিচিং পাউডার ৪০ হাজার কেজি, তরল জীবনুনাশক ২ হাজার ৭২০ লিটার, ফিনাইল ৩১৫ লিটার।
ল্যান্ডফিলে ঈদুল আজহার অতিরিক্ত বর্জ্য পরিবেশসম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৪০ ফুট বাই ৩০ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের দুটি পরিখা খনন করা হয়েছে এবং দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাসহ অতিরিক্ত যান-যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ড্রেসিং কার্যক্রমে ৬টি বুলডোজার, ৩টি চেইন এস্কেভেটর, দুটি লং আর্ম এস্কেভেটর ও দুটি হুইলডোজার নিয়োজিত রাখা হবে। প্রতিটি বাড়ি হতে দ্রুত বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য পর্যাপ্ত ভ্যান সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হবে। এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করা হবে।
কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে মহাখালী আঞ্চলিক কার্যালয়ে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর ৯৮৩০৯৩৬। তাছাড়া নতুন অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলসহ ৫টি পুরাতন আঞ্চলিক কার্যালয় ও ৫৪টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের অফিস কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া দ্রুত বর্জ্য অপসারণ ও এ সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম ছাড়াও যে মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে :
অঞ্চল-১ (উত্তরা, কুড়িল, খিলক্ষেত, টানপাড়া, জোয়ার সাহারা, নিকুঞ্জ, আজমপুর, আব্দুল্লাহপুর এলাকাসমূহ) এবং অঞ্চল-৮ (উত্তরখান, মাজার রোড এর উত্তর ও দক্ষিণ অংশ) ০১৭১৭১০২০২৫।
অঞ্চল-২ (মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকা, পল্লবী, মিরপুর-১, ১০, ১২ ও ১৪ এলাকাসমূহ) এবং অঞ্চল-৬ (হরিরামপুর এলাকা) ০১৭১১৩১৩২৮৯।
অঞ্চল-৩ (গুলশান, বনানী, বাড্ডা, নর্দা, নাখালপাড়া, মগবাজার, রামপুরা, বনশ্রী এলাকাসমূহ) এবং অঞ্চল-৯ (ভাটারা এলাকা) ০১৯২৩১১৩৬৩৬।
অঞ্চল-৪ (শেওড়াপাড়া, রোকেয়া সরণি, কল্যাণপুর, দারুস সালাম এলাকাসমূহ) এবং অঞ্চল-৭ (দক্ষিণখান এলাকা) ০১৭৩৩৮৯৫৫৩২।
অঞ্চল-৫ (কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, মনিপুরীপাড়া, তেজকুনী বাজার, লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এলাকাসমূহ) এবং অঞ্চল-১০ (বাড্ডা, সাতারকুল ও বেরাইদ এলাকা) ০১৭১১৫৭৭৪৭৪। কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকির জন্য ১৯ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের তদারকির জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ‘এসব স্থানে পশু কোরবানি করার সব ব্যবস্থা রাখা থাকবে। এ ছাড়া পশু কোরবানি দেয়ার পর কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেয়া বর্জ্য ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ করে নিকটস্থ কনটেইনারে ফেলবেন। যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নগরীর বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানির বর্জ্য প্রথম দিনে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা হবে। এ জন্য নগরবাসীকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দেয়ার আনুরোধ জানাচ্ছি। তবে কেউ যদি কোনো কারণে নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে নিজ আঙিনা বা সুবিধাজনক স্থানে কোরবানি করেন, তাহলে কোরবানির পশুর বর্জ্য ড্রেনে ফেলবেন না। কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেয়া বর্জ্য ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ করে সড়কের পাশে রাখেন যাতে করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সহজেই এ ময়লা অপসারণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধে নগরী পরিচ্ছন্ন করতে পারে। এ ছাড়া কোরবানির স্থান স্যাভলনের পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন, যেন পরিবেশ দূষণ না ঘটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির ২য় দিনের বর্জ্য দিনশেষে রাতের মধ্যে এবং ৩য় দিনের বর্জ্য ওইদিন রাতের মধ্যেই অপসারণ করা হবে। পরিচ্ছন্নতা কাজে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। অন্যথায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ৫ হাজার ২৪১ জন নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত ১ হাজার ২৫২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া পিসিএসপি থাকবে ৩ হাজার জন এবং ভ্যান সার্ভিস থাকবে ৬০০টি।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ইতোমধ্যে ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার, স্যাভলন ১৮০০ লিটার, ব্লিচিং পাউডার ১৪০০ ড্রাম এবং ১ লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। কোরবানির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০২টি, সামিয়ানা টাঙানো হবে ৩২৯টি স্থানে, ঈদের দিন খোলা ট্রাক থাকবে ১১৭টি, কনটেইনার বক্স থাকবে ৮২টি, ড্রাম ট্রাক থাকবে ৮০ টি।
এএস/এনডিএস/জেআইএম