দেশজুড়ে

তাড়াশে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পালিত হচ্ছে কোরবানির গরু

কোরবানিকে সামনে রেখে দেশের যে কয়েকটি এলাকায় গরু মোটাতাজা করা হয় তার মধ্যে সিরাজগঞ্জ অন্যতম। এবারো কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। তবে অধিক মুনাফা অর্জন করার লক্ষে গরু ব্যবসায়ীরা রাসায়নিক খাবার ও স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট দিয়ে গরুকে মোটাতাজা করে থাকে। এই পদ্বতিতে গরু মোটাতাজা করা হলে সেই মাংস খেয়ে মানবদেহে ক্ষতি হতে পারে বলে চিকিসকরা বলে আসছেন। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্বতিতে গরু মোটাতাজা করছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার চলনবিল ফিশারিজ লিমিটেড। তারা শুধু গরু মোটাতাজাকরণই নয় পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়ে ভেড়া, ছাগল ও মাছ উৎপাদনও শুরু করেছে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের কারণে এখানে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। সরেজমিনে জানা যায়, চলনবিল অধ্যষুত্য তাড়াশ উপজেলার চৌপাকিয়া গ্রামের ৮৭ বিঘার উপর স্থাপন করা হয়েছে চলনবিল ফিশারিজ লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানে পৃথকভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ২টি গরু প্রতিপালনের সেড। একই সাথে ৪টি মুরগি উৎপাদনের সেড, একপাশে ছাগল ও ভেড়ার জন্যও নির্মাণ করা হয়েছে সেড। এ ছাড়াও ১৭টি পুকুর কেটে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো অঞ্চল জুড়ে রোপন করা হয়েছে আম, মেহগুনিসহ নানা ধরনের গাছ। নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে।এই প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার পদে কর্মরত রাশেদুল হাসান রঞ্জন জাগো নিউজকে জানান, সারাদেশে গরু মোটাতাজা করতে রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। ঠিক সেই সময়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হবে। এই প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র দেশীয় গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। গরুর পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার মুরগিও পালন করা হচ্ছে। গরু ও মুরগির বিষ্টা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।গরু মোটাতাজাকরণের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক সিদ্দিক আলী জানান, এই প্রতিষ্ঠানের সব গরু দেশি। গরুগুলোকে প্রাকৃতিক ঘাস, ভুষি, খৈল, খড়সহ রাসায়নিক মুক্ত খাবার দেয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য বা ট্যাবলেট গরুকে দেয়া হয় না। ক্ষতিকারক কোনো ট্যাবলেট না দেবার কারণে অন্য প্রতিষ্ঠানের গরুর মতো এখানে রাতারাতি মোটা হয় না। অন্য ফার্মগুলোতে যেখানে ৩ থেকে ৪ মাসেই গরু মোটাতাজা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, সেখানে এই প্রতিষ্ঠানে সারা বছরই গরু মোটাতাজাকরণ কাজ করা হয়ে থাকে। যে কারণে এই প্রতিষ্ঠানের গরু সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত।প্রকল্পের সুপার ভাইজার আলমগীর হোসেন জানান, শুধু কোরবানি ঈদে নয়। সারাবছরই এখানে দেশীয় জাতের ষাড় গরু উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে এ প্রকল্পে ২৪৬টি গরু রয়েছে। ২ বছর বয়সী গরুগুলো ক্রয় করা হয় গড়ে প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকায়। ৫ থেকে ৬ মাস লালন-পালন করে এগুলো বিক্রি করা হয়। ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোনো কোনোটি লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়। এ বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ১৬০টি গরু বিক্রির প্রস্ততি নেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ জানান, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের গরুগুলোকে নিষিদ্ধ ডেক্সামেথ্যাসন ট্যাবলেট খাইয়ে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া চলে আসছিল। এতে এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছিল। চলনবিল ফিশারিজের এ ধরনের উদ্যোগ নেবার কারণে এলাকাবাসী তাদের সাধুবাদ জানায়। প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার জানান, আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি, এলাকার কিছু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি এগিয়ে নেবার জন্য শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড সিরাজগঞ্জ শাখা তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। গরু, ভেড়া, মুরগি ও মাছ চাষের পাশাপাশি এ প্রকল্পের মাধ্যমে বায়োগ্যাস ও জৈব সার উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। সম্পূর্ণ প্রকৃতিক উপায়ে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত আমিষের যোগান দেয়াই তাদের পরিকল্পনা। সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের বৃহৎ মানুষের আমিষের যোগান দেয়া সম্ভব বলেও তিনি জানান। তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু হানিফ জানান, চলনবিল ফিশারিজের দেশীয় জাতের ষাড় উৎপাদন প্রকল্পটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়ে থাকে। এখানে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়েই ষাড়গুলোকে পালন করা হচ্ছে। তাদের এই উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যরাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করবে বলে তিনি আশা করেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাজহারুল আলম আকন্দ বলেন, চলন বিল ফিশারিজ কোম্পানির প্রকল্পটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। এ ধরণের উদ্যোগ নিলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসম্মত আমিষ উৎপাদন সম্ভব, অপরদিকে বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তাদের এই উদ্যোগ দেশের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের স্বাস্থ্যসম্মত মাছ-মাংস উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। এমএএস/এমএস

Advertisement