দেশজুড়ে

মির্জাপুরের ৮ যুবকের ভারতে মানবেতর জীবন যাপন

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ৮ যুবক মানবপাচারকারীর খপ্পরে পড়ে ১৩ মাস ধরে ভারতের বালুঘাট জেলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নজরুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া ঘোনাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগী মোহাম্মদ আলী প্রায় দুই বছর আগে মালদ্বীপ পাঠানোর কথা বলে ৮ যুবকের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ করে টাকা নিয়েছেন। পরে মানবপাচারকারীরা প্রতারণার মাধ্যমে ৮ যুবককে মালদ্বীপ না পাঠিয়ে ভারতে পাঠান। ভারতের জেলে আটকরা হলেন, এ উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া (ঘোনাপাড়া) গ্রামের মৃত হামেদ আলীর ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৪৫) ও নালু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী (৪০), একই ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের বাবুল (৩৫), সবুজ মিয়া (২৬), জয়নাল (৪৩), রিপন (৩০), পাশ্বর্বতী মহেড়া ইউনিয়নের মহেড়া গ্রামের জুলহাজ (৩৫), হিলড়া আদাবাড়ি গ্রামের সোহেল (২৮), জামুর্কী ইউনিয়নের ধল্যা গ্রামের আলমগীর (২৬) ও পাশ্বর্বতী দেলদুয়ার উপজেলার কামান্না গ্রামের সুজন মিয়ার (২৬) কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে নেয়। টাকা নেয়ার পর থেকে আদম পাচারকারীরা তাদের বিদেশে না পাঠিয়ে নানাভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এ নিয়ে এলাকায় মাতাব্বররা মানবপাচারকারীদের নিয়ে সালিশ বৈঠক করেন। পরে মানবপাচারকারীরা গত বছরের ১৪ আগস্ট তাদের মালদ্বীপ পাঠানোর কথা বলে ঢাকার উত্তরার গ্লোবাল এজেন্সি নামে একটি অফিসে নিয়ে যান।সেখানে মালদ্বীপগামীদের সঙ্গে আসা আত্মীয় স্বজনদের জানানো হয় ওই দিন রাতে তারা বিমানযোগ মালদ্বীপ চলে যাবে। একথা শুনে আত্মীয়রা বাড়িতে চলে আসেন। এরপর থেকে ওই ৮ যুবকের কোনো খোঁজ খবর মেলেনি। মানবপাচারকারীদের কাছে আত্মীয়রা জানতে চাইলে পাচারকারীরা জানায় তারা সবাই মালদ্বীপ চলে গেছে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো খোঁজ খবর না পাওয়ায় বিদেশগামী ৮ যুবকের আত্মীয়দের সন্দেহ হয়। পরে তারা টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরের এক গরু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে জানতে পারেন মালদ্বীপগামী ৮ যুবক ভারতের দিনাজপুরের বালুঘাট জেলখানায় আটক আছেন। এ খবর জেনে জয়নালের বাবা ওয়াহেদ আলী ও ছোট ভাই জহিরুল চার মাস আগে ভারতে গিয়ে ওই জেলে ৮জন আটক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর ভুক্তভোগীদের অভিভাবকরা এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যান হুমায়ুন তালুকদার ও মাতাব্বরগনদের নিয়ে শালিস বৈঠক করেন। এ সময় দুই মানবপাচারকারী নজরুল ও মোহাম্মদ আলী ৮ যুবককে দ্রুত জেল থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাড়া পান। কিন্তু পরে তারা এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ ও তালবাহানা করলে জেলে আটক রিপন, সবুজ মিয়া ও বাবুলের আত্মীয় মো. সিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে গত ২১ মে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করলে পুলিশ ২২মে মানবপাচারকারীর মূলহোতা নজরুলকে উপজেলার ধল্যা বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে।পরে থানা পুলিশ আদালতের মাধ্যমে নজরুলকে ২ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। নজরুল বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলহাজতে আটক রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছেন।অপরদিকে নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা করায় বাদি সিরাজুল ইসলামকে আসামি পক্ষের লোকজন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন। পাচারের শিকার জয়নালের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম বলেন, স্বামীকে মালদ্বীপ পাঠানোর জন্য তিনি ব্র্যাক এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। এনজিও ও মহাজনদের চাপে এখন বাড়িতে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।সোহেলের বাবা সোমেদ আলী জানান, তিনি ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে বসতবাড়ির ৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৩ শতাংশ জমি বিক্রি করেছিলেন।ভারতে আটক জয়নালের ছোট ভাই জহিরুল ইসলাম জানান, গত প্রায় চার মাস আগে ভারতের দিনাজপুরের বালুঘাট জেলখানায় তার ভাইসহ ৮ জনকে মানবেতর জীবন যাপন করার বিষয়টি সচোখে দেখে এসেছেন।ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারতের জেলে আটকদের ছাড়িয়ে আনার জন্য মানবপাচারকারী নজরুল ১৫ জুন র্পযন্ত সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ের আগেই নজরুল পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাছির জাগো নিউজকে জানান, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। পরে পররাষ্ট্রম ন্ত্রণালয় থেকে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আটকদের ২ বছরের সাজার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আটকদের সাজার মেয়াদ শেষের দিকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।মির্জাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মানবপাচারকারী নজরুলকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।এসএস/এমএস

Advertisement