জাতীয়করণের দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করে কোনো সুখবর পেলেন না বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অবশেষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের আশ্বাসে শনিবার (১০ আগস্ট) আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন তারা। দাবি আদায়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে ফুটপাতে ৫৫ দিন ধরে অবস্থান করছিলেন।
Advertisement
জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চলতি বছরের ১৬ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথমে ২৮ জুন পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরে ২৯ জুন প্রতীকী অনশন করে ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি পালন করেন। এরপর গত ৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। অবশেষে খালি হাতেই বাড়ি ফিরলেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
টানা এ আন্দোলনে ৩১৫ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৫ জন শিক্ষক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপরও জাতীয়করণের দাবি বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা না দেখে রীতিমত হতাশ হয়ে পড়েন তারা। এ কারণে অনেক শিক্ষক একে একে বাড়িও ফিরতে শুরু করেন। এদিকে গতকাল শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন আন্দোলনরত শিক্ষকদের কাছে গিয়ে দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি দুইদিন পর ঈদ, তাই রাস্তায় না থেকে শিক্ষকদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগ সভাপতির আশ্বাসের পর শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন। আলোচনার মাধ্যমে তারা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয়করণের দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর আজ শনিবার (১০ আগস্ট) প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন তারা। আন্দোলন স্থগিতের পর বিকেল থেকেই একে একে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন অনশনরত শিক্ষকরা।
Advertisement
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, টানা ৫৫ দিন আন্দোলন করে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমাদের অনেক শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন, ১৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু দুইদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা -এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আমরা আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মামুনুর রশিদ খোকন আরও বলেন, আমাদের দাবির সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি। তার ওপর আস্থা রেখে আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলে আগামী বছরের শুরুতে আবারও শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নামবেন।
সরকারের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণার পর সারাদেশে ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হলেও প্রায় ৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় এ থেকে বঞ্চিত হয়। সকল শর্ত পূরণ হলেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে একত্রিত হয়ে এ আন্দোলনে নামেন সারাদেশের শিক্ষকরা।
এমএইচএম/আরএস/এমএস
Advertisement