জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সোমবার (১২ আগস্ট) পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কামাররা। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। যদিও তাদের দাবি, কোরবানির হাতিয়ার এখনো তেমনভাবে বিক্রি শুরু না হওয়ায় জমে ওঠেনি কামার বাজার। সবাই পশু কিনতে ব্যস্ত থাকায় এখনো দা-ছুরি ক্রয় শুরু করেননি ঢাকাবাসীরা।
Advertisement
কোরবানির ঈদ আসলেই ঢাকা মহানগরীর মুসলমানদের ঘরে ঘরে দা-বটি-ছুরি, কুড়াল-চাপাতিতে শান দেয়া আর কেনাকাটার ধুম পড়ে। কোরবানির ঈদের সময় গরু, ছাগল, উটসহ বিভিন্ন কোরবানির পশুর মাংস প্রস্তুত করতে দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ নানা হাতিয়ারের প্রয়োজন হয়।
রাজধানীতে যারা কোরবানি দেন তারা নিশ্চয় ঢাকার কামার পাড়ার খোঁজ-খবর ভালো জানেন। রাজধানীর কামার পাড়ার মধ্যে ঠাটারী বাজার ও কারওয়ান বাজারের কামারপট্টি অন্যতম। তবে ঈদ উপলক্ষে এ দুই জায়গা ছাড়াও নিউমার্কেট, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেট, চকবাজার, কাপ্তান বাজার, খিলগাঁও, মিরপুর-১সহ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় সব মার্কেটেই এসব হাতিয়ার পাওয়া যাচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের এক দোকানদার জানান, এখনো বিক্রির ধুম পড়েনি, ক্রেতার সমাগমও কম। তবে আজ (শনিবার) বিকেল থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করি।
Advertisement
কারওয়ান বাজারের জেরিন হার্ডওয়ারের দোকানদার জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে তৈরি করা চাপাতি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কাচা লোহার চাপাতির দাম একটু কম। পাকা লোহার বা স্পাতের তৈরি জিনিসের দাম বেশি। পাকা লোহার তৈরি জিনিসের চাহিদাও বেশি। এখানে আবার বিভিন্ন দামের চায়না, কুড়িয়ান এবং থাইল্যান্ডের চাপাতিও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পশু জবাইয়ের জন্য মাঝারি থেকে বড় ছুরির দাম সাড়ে ৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এছাড়া সাধারণ ছুরির দাম ৯০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। দা-বটির দাম নির্ভর করে ওজনের ওপর।
কামারপট্টিতে বানানো ছাড়াও রাজধানীর সুপারশপগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানির ছুরি, কাঁচি, কুড়াল পাওয়া যাচ্ছে। নিউমার্কেটে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে নানা রকমের ছুরি। চাপাতি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। জাপানি ছুরির ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, চাইনিজ কুড়াল আকার অনুযায়ী ৩০০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মা জননী কর্মশালের দোকানদার মো. সুমন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আকার ও লোহার ওজনের ওপর দাম কম-বেশি রয়েছে।
Advertisement
রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরী বাজার থেকে কারওয়ান বাজারে আসা ৬৫ বছর বয়সী সানাউল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি ছোট্ট ছুরি শান দিতে একশ টাকা চায়। দামাদামি করেও কম নেয়নি।’ দোকানের কর্মচারী আশরাফ বলেন, ‘যে যাই করুক কাজের জন্য যেকোনো জিনিসে হাতে দিলেই ৫০ টাকা। কাজ ছোট্ট-বড় যাই হোক।’
সরজমিনে কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতে লোকজনও ভিড় করছেন তাদের কাছে। আগে যেসব দোকানে দু-একজন শ্রমিক কাজ করতেন এখন সেসব দোকানে অনেক বেশি শ্রমিক কাজ করছেন।
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ‘মা জননী ৫ ভোলা সদর কর্মশালা’ দোকানের এক কর্মচারী জাগো নিউজকে বলেন, সারাবছর কামারের দোকানে কাজ কম থাকলেও কোরবানি ঈদে কাজ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ছুরি শান দেয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াইশ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছি। আর বেচা বিক্রি এখনো খুব বেশি শুরু না হলেও আশা করছি বিকেল থেকে বাড়বে।
প্রকাশ মন্ডল নামে একজন বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আমাদের বিক্রি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ঈদের দুইদিন আগে থেকে ২৪ ঘণ্টা বেচাকেনা চলে। তখন আমাদের খাওয়া-দাওয়ারও সময় থাকে না।
একই দোকানের আরও একজন বলেন, লোহা ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গেছে, সে কারণে চাপাতি, ছুরি ও দায়ের দাম একটু বেশি। বেশি দামে বিক্রি না হলে আমাদের লাভ হয় না।
দোকানি বাদল মিয়া বলেন, ঈদকে সামনে রেখে কাজের চাপ বেশি। কাজের চাপে কখন খাওয়ার সময় চলে যায় আমরা টেরও পাই না। আমাদের এখানে চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বিক্রিও তত বাড়ছে।
চাপাতি কিনতে ও ছুরিতে শান দিতে কামারপট্টি এসেছেন আব্দুল জলিল। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, একটি চাপাতি কিনেছি সাড়ে ৮শ’ টাকায়। এছাড়া ছুরি, দাসহ বিভিন্ন জিনিস ঠিক করে নিলাম। ঈদকে কেন্দ্র করে অনেকে বেশি মজুরি নিচ্ছে।
মগবাজার থেকে কাওরান বাজারে আসা শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কামাররা তাদের মজুরিসহ ছুরি, দা, চাপাতির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি চাপাতি কিনেছি ৭০০ টাকায় এবং ছুরি আড়াইশ টাকায় কিনলাম। যেসব জিনিস দেড়-দুই মাস আগে অনেক কম দাম ছিল।
এফএইচ/আরএস/এমএস