ধর্ম

আরাফাতের ময়দানে মুসলিমদের একত্রিত হওয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ জাবালে রহমতের পাদদেশে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হওয়া হজের অন্যতম বিধান। হাদিসের ভাষায়- ‘আল হাজ্জু আরাফাহ’ অর্থাৎ হজ হলো আরাফাহ।

Advertisement

সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ স্থানে একত্রিত হওয়া হজের অন্যতম রোকন। তাই ৯ জিলহজ জাবালে রহমত থেকে শুরু করে মসজিদে নামিরাসহ আরাফার ময়দানের চিহ্নিত সীমানার মধ্যে যে কোনো সুবিধামত স্থানে অবস্থান গ্রহণ করা।

আরাফাতের ময়দানে বিশ্ব মুসলিমের একত্রিত হওয়ার এ মিলন-মেলার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কী? কেনইবা আরাফাতের ময়দানে অনুপস্থিতির কাফফারাও হয় না? এখানে উপস্থিত হওয়াকে হজের অন্যতম রোকনই বা করা হলো কেন?

যে কারণে আরাফায় উপস্থিতিই হজওকুফে আরাফা বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের প্রধান কারণ হলো, আল্লাহর মেহমানদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, সৃষ্টির সূচনাতে এ পবিত্র উপত্যকায় সবার আগে ‘আহদে আলাস্তু’ তথা রব হওয়ার স্বীকৃতিমূলক শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

Advertisement

আল্লাহ তাআলা সেদিন আদমের পিঠ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যত বনি আদম আসবে, তাদের পিপীলিকার অবয়বে সৃষ্টি করে তাদের জিজ্ঞাসা করেন- ‘আলাসতু বিরাব্বিকুম অর্থাৎ আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’

জওয়াবে সেদিন দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহকে প্রভু বলে স্বকৃতি দিয়েছিলেন বলেছিলেন ‘হ্যাঁ’। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে সে ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন-- ‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তান-সন্তুতি বাহির করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলে, ‘নিশ্চয়ই; আমরা স্বাক্ষী রইলাম। (এ স্বীকৃতি গ্রহণ) এ জন্য যে, তোমরা যেন কেয়ামতের দিন না বল, আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না।- কিংবা তোমরা যেন না বল, ‘আমাদের পূর্বপুরুষগণই তো আমাদের পূর্বে অংশী স্থাপন করেছে। আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর। তবে কি মিথ্যাবাদীদের কৃতকর্মের জন্য তুমি তাদেরকে ধ্বংস করবে?’- আর এভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিবৃত করে রাখি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭২-১৭৪)

প্রতি বছর ৯ জিলহজ হজের দিন বিশ্ব মুসলিম সম্মিলন ‘ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে’-উপস্থিতি সব মানুষকে সেই তাওহিদের স্বীকৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ কারণেই মানুষের ইয়াওমে আরাফা তথা ৯ জিলহজকে হজের অন্যতম রোকন সাব্যস্ত করা হয়েছে।

Advertisement

এ দিন মানুষের সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও স্বীকৃতির স্মরণ হলেই মানুষ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি, তাওবা-ইসতেগফারে, তাসবিহ-তাহলিল ও তাকবিরে নিয়োজিত হয়।

বিশেষ করে৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে সে ইতিহাস স্মরণ করা বা স্মৃতিচারণ করা জরুরি যে, ‘এ ময়দানেই একদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের থেকে তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নেয়ার স্বীকৃতি গ্রহণ করেছিলেন। আর আমরা তাকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করেছিলাম।

সুতরাং আজকের দিনে হজে গমনকারীরা ছাড়াও সারাবিশ্বের সব মুসলমানের এ প্রতিজ্ঞা করা উচিত, ‘শয়তানের দাসত্ব থেকে বের হয়ে আমৃত্যু আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকার করা এবং তার যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে নিষ্পাপ জীবন-যাপন করা। মানুষের জীবন-মরণ-ইবাদত ও ত্যাগ একমাত্র আল্লাহর কাছে ন্যস্ত করা।

এ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে পারলে মহান আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা না করে পারেন না। তাই ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে তার তাসবিহ-তাহলিল, তাকবির ও দোয়া-দরূদের মাধ্যমে নিয়োজিত রাখা জরুরি।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস মানুষকে ইয়াওমে আরাফার ইবাদত-ক্ষমাপ্রার্থনা ও আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করে থাকেন এবং তার নিকটবর্তী হন ও ফেরেশতাদের কাছে গৌর্ব করে বলেন, দেখ ওরা কি চায়? (মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তিনি নিম্ন আকাশে নেমে আসেন ও ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা সাক্ষী থাক আমি ওদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।’ (মুসনাদে বাযযার, তাবারানি, তারগিব)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন-‘শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো আরাফার দোয়া।’তাই আল্লাহ তাআলার সেই ঐতিহাসিক স্বীকৃতির কথা স্মরণ করে তার কাছে দোয়া-দরূদ ও ইসতেগফারে নিয়োজিত থাকা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নার নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে নিষ্পাপ করে দিন। হজ পালনকারীদের হজে মাবরুর দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ