পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত পায়রাকুঞ্জ খেয়াঘাটে অস্বাভাবিক যাত্রী হয়রানি চলছে। সেখানে ট্রলার ও স্পিডবোটে পায়রা নদী পারাপারে ইজারাদারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা।
Advertisement
যাত্রীদেরঅভিযোগ করেছেন ইজারাদারের লোকজন তাদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। প্রতিবাদ করলেই ভাইয়া বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, পায়রা নদীর পায়রাকুঞ্জ থেকে মির্জাগঞ্জে যাতায়াতের জন্য একমাত্র ভরসা ফেরি ও খেয়াঘাট। খেয়ার ইজারাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে দিন-রাত মিলিয়ে মাত্র তিনবার ফেরি যাতায়াত করে। এ সুযোগে ইজারাদারের লোকজন যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছে মাফিক ভাড়া আদায় করে। যা সবাই জানে।
তারা বলেন, এনিয়ে ঘাটে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন ইজারাদারের পেটোয়া বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। জেলা পরিষদ কর্তৃক ভাড়া আদায়ের চার্ট দেয়া হলেও তা উল্টো করে রাখা হয়। নির্ধারিত ভাড়ার দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। পটুয়াখালী জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এই খেয়াঘাটের নির্ধাারিত টোল হচ্ছে- জন প্রতি ১০ টাকা, চালকসহ বাইসাইকেল ১২ টাকা, চালকসহ মোটরসাইকেল ২৫ টাকা, রিকশা/ভ্যান/ঠ্যালাগাড়ি ১৩ টাকা, গরু/মহিষ এক বছরের উপরে ১৫ টাকা, এক বছর পর্যন্ত ১০ টাকা, ছাগল/ভেড়া ৮ টাকা।
Advertisement
এছাড়া ১৫ কেজির উপরে মালামাল ০.২৫ টাকা, সিমেন্ট/ সার /চালের বস্তা ৫০ কেজি পর্যন্ত ৮ টাকা, ৫০ কেজির উপরে ১০ টাকা, আসবাবপত্র প্রতিটি ১৫ টাকা, ডেউটিন প্রতি বান্ডিল ২০ টাকা, হাঁস/মুরগি ভর্তি খাঁচা ১৫ টাকা। এছাড়া শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে কোনো টোল আদায় করা যাবে না। কিন্তু সেই নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করে না ইজারাদারের লোকজন।
যাত্রী সফিকুল, সিহাব, সুমন অভিযোগ করেন, পায়রাকুঞ্জ খেয়াঘাটে ইচ্ছেমতো টোল আদায় করা হয়। জনপ্রতি আদায় করা হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। খেয়াঘাটে মোটরসাইকেলে একাধিক লোক থাকলে ৬০ থেকে ৮০ টাকা নেয়া হয়। আর অটো বা মালামালসহ দুইজন হলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।
তারা বলেন, একটি সিন্ডিকেট এ খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ করছে। আর ওই সিন্ডিকেটের লোকজন ট্রলারে যাত্রী পারাপার করে থাকে। তারা ইচ্ছেমতোই ভাড়া আদায় করে থাকে। এ ব্যাপারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কারও কথা বলার সাহস পর্যন্ত নেই।
যাত্রী সওয়াম মিয়া বলেন, সম্প্রতি আমি আর আমার এক বন্ধু খেয়া পার হই। মোটরসাইকেলও আমরা দুইজনসহ ৬০ টাকা ভাড়া রেখেছে ইজারাদারের লোকজন। আমরা প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের ভাইয়া বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়।
Advertisement
সম্প্রতি টোল আদায়কারী জহিরুল ইসলাম মনু এ প্রতিনিধিকে বলেন, এ ঘাটের ইজারাদারকে দিয়ে আপনি কী করবেন? ভাড়া আমরা যা চাই তাইই দিতে হবে।
বেশি টাকা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনি কে? শেখ হাসিনা নিজেও যদি এখানে আসে তাও একই টাকা দিতে হবে। টাকা দিয়ে ঘাট নিয়েছি, এখানে আমরা যা বলব তাই হবে।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান বলেন, বাড়তি টাকা আদায় করা হলে তাদের ইজারা বাতিল করা হবে- মর্মে ইতোমধ্য খেয়াঘাটের ইজারাদারকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ইতোমধ্যে জরিমানা করেছে এবং জরিমানা আদায় করার পরে তাদের চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের ইজারা চূড়ান্ত বাতিল করা হবে।
এদিকে সরকার খেয়াঘাটে নিয়োজিত অসাধু ইজাদারের অত্যাচার থেকে সাধারণ যাত্রীদের দ্রুত মুক্তি দেবে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এমএমজেড/এমকেএইচ