খেলাধুলা

হজ শেষে অল্প প্রস্তুতিতেই ফের ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠবেন সাকিব?

তার বিপক্ষে এখন আর কোন অভিযোগই টিকবে না। তিনি জাতীয় দলের অনুশীলনে কম সময় থাকেন। আইপিএল খেলায় ব্যস্ত থাকা কিংবা অন্য কোন কারণে প্র্যাকটিসে অন্যদের পরে যোগ দেন-এসব বলেও আর লাভ হবেনা। কারণ বার বার বহুবার সাকিব প্রমাণ করেছেন, সবার পরে অনুশীলনে যোগ দিয়ে নাম মাত্র প্রস্তুতি নিয়েও তিনি ভাল খেলতে পারেন। এবং দিন শেষে তার পারফরমেন্সটাই হয় সেরা। এবারের বিশ্বকাপেও তার জ্বলন্ত নজির রেখেছেন সাকিব।

Advertisement

আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পক্ষে খেলতে গিয়েছিলেন। তাই জাতীয় দলের আয়ারল্যান্ড আর বিশ্বকাপ প্রস্তুতির শুরু থেকে থাকতে পারেননি। এবং শেষ খবর হলো, এবার ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের প্রাথমিক অনুশীলন বা কন্ডিশনিং ক্যাম্পের শুরু থেকেও থাকতে পারবেন না বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য এখন মক্কায় অবস্থান করা সাকিবের দেশে ফিরতে ফিরতে ২০-২১ আগস্ট। তার তিন চার দিন আগে শুরু হয়ে যাবে কন্ডিশনিং ক্যাম্প।

সাকিবকে যারা চেনেন, জানেন-তারা এতটুকু চিন্তিত নন। কারণ ইতিহাস জানাচ্ছে, সাকিব আইপিএল খেলার কারণে বিশ্বকাপের আগেও জাতীয় দলের সাথে প্রস্তুতি পর্বে অংশ নিতে পারেননি। প্রাথমিক প্রস্তুতিতো নয়ই, মূল প্রস্তুতিপর্বেও অনুপস্থিত ছিলেন। দেশ ছাড়ার মাত্র দুদিন আগে এসে অফিসিয়াল ফটোসেশনে অংশ না নিয়ে আবার জড়িয়ে পড়েন বিতর্কেও।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনোটাই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। জাতীয় দলের সাথে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ প্রস্তুুতির প্রায় পুরো সময় দেশের বাইরে থেকে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অল্প কদিনের প্র্যাকটিসে মাঠে নেমেই বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন।

Advertisement

ব্যাট হাতে বিশ্বকাপই শুধু নয়, ক্যারিয়ারের সেরা পারফরমেন্স দেখিয়েছেন সাকিব। একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে যত ভাল খেলা সম্ভব, বিশ্বকাপে তাই খেলেছেন। শ্রীলঙ্কার সাথে ব্রিস্টলে বৃষ্টিতে ম্যাচ হয়নি। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আউট হয়েছিলেন ৪১ রানে। এছাড়া বাকি সাত ম্যাচে পঞ্চাশের ওপরে রান আর ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা পারফরমার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন সাকিব।

ব্যাট হাতে ৮ ইনিংসে দুই শতক আর চার হাফসেঞ্চুুরিসহ ৬০৬ রান ও বল হাতে ১১ উইকেট দখল করে সাকিব আসলে বিশ্বকাপের ’ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’ পুরস্কারের অন্যতম দাবিদারও বনে যান। শেষ পর্যন্ত কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন প্রায় একার চেষ্টায় ব্যাট হাতে অবদান রাখার পাশাপাশি দলকে ফাইনালে তুলে বিশ্বকাপ সেরা পারফরমার হলে সাকিবের সেটি হয়নি। তারপরও তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু। অনেকের চোখে এ বাঁহাতি অলরাউন্ডারই ছিলেন এবারের বিশ্বকাপের সত্যিকার সেরা পারফরমার।

বিশ্বকাপের পর লন্ডনে থাকতেই সাকিব বিশ্রাম চেয়ে ছুটির আবেদন করে বসেন। কদিন স্ত্রী সন্তানসহ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে পবিত্র হজব্রত পালনের ছুটিতে এখন মক্কায় অবস্থান করছেন এ সময়ের আলোচিত ক্রিকেটার। হজের ছুটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজেও বাইরে ছিলেন সাকিব। তাকে ছাড়া কলম্বোয় চরমভাবে পর্যুদস্ত টাইগাররা। ব্যাটিং আর বোলিং দুই বিভাগেই তার অভাব বোধ হয়েছে প্রচন্ড।

এখন সাকিব ভক্তরা উন্মুখ হয়ে আছেন দেশ তথা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার কবে হজ পালন শেষে দেশে ফিরবেন। জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সাথে কথা বলে জানা গেছে এবারো সাকিব শুরু থেকে প্র্যাকটিসে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

Advertisement

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সাথে আলাপে নান্নু জানিয়েছেন, হজের কিছু নিয়ম কানুন ও আনুষ্ঠানিকতা আছে। তাই সাকিবের পক্ষে ২০ আগস্টের আগে দেশে ফেরা কঠিন হবে। দেশে ফেরার দিন তিনেক আগে ১৮ আগস্ট কন্ডিশনিং ক্যাম্প শুরু হয়ে যাবে।

হজ পালনেরও একটা শারীরিক ক্লান্তি আছে। তাই ধরেই নেয়া যায়, ২০-২১ আগস্ট দেশে ফিরে অন্তত সপ্তাহখানেক বিশ্রাম নেবেন সাকিব। তারপরও অবশ্য সাত দিনের মত সময় পাবেন নিজেকে প্রস্তুত করার। কারণ আফগানিস্তানের সাথে একমাত্র টেস্ট শুরু ৫ সেপ্টেম্বর। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঐ টেস্টের আগে ২৭-২৮ আগস্টের দিকে প্র্যাকটিস শুরু করতে পারলেও এক সপ্তাহ অনুশীলন করার সুযোগ পাবেন সাকিব।

এমনকি তার ট্র্যাক রেকর্ড বলে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আরও কম অনুশীলন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে দেশে ফিরে দিন দশেক বিশ্রাম নিয়ে আগস্ট পার করে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাট ও বল হাতে নেমে পড়তে পারেন প্র্যাকটিসে। তাহলে দিন চার পাঁচেক অনুশীলন করার সুযোগ থাকবে।

শুধু এবারের বিশ্বকাপ নয়। সাকিব বার বার প্রমাণ করেছেন, সবার পরে অল্প কদিনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেও ভাল খেলা সম্ভব। সেই জাদুটা আছে তার। আসলে বোঝাই যায়, সাকিব নিজেকে সব সময় মানসিকভাবে তৈরি রাখেন। আর অসম্ভব ফিটনেস সতর্ক এ অসামান্য প্রতিভার অধিকারি ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ টেম্পারামেন্ট, মেজাজ, মনোযোগ, মনোসংযোগ আর সর্বোপরি জায়গা মত নিজেকে ব্যাট ও বল হাতে মেলে ধরার ক্ষমতা অনেক বেশি।

সাকিব জানেন, কখন কোন ফরম্যাটে কার সাথে কোথায় কি করতে হবে। আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে সাফল্যের মন্ত্রটাও তার খুব ভাল জানা। সে কারণেই দিনক্ষণের হিসেব কষে প্র্যাকটিস করেন না। সেই অতি মেধাবি ছাত্ররা যেমন নিজেকে সারা বছর তৈরি রেখে পরীক্ষার অল্প কদিন আগে নিজেকে ঝালাই করে ঠিক পরীক্ষায় ভাল করে ফেলেন, সাকিবও তেমনি।

বিশ্বকাপে সেই প্রমাণ রাখা সাকিব আফগানিস্তানের সাথে এক ম্যাচের টেস্ট আর জিম্বাবুয়ে-আফগানদের সাথে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেও নাম মাত্র প্রস্তুতিতেই মাঠে নামবেন।

কারণ ১৮ আগস্ট আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরুরও অন্তত দুই থেকে তিন আগে বাকিরা ব্যক্তিগত পর্যায়ের অনুশীলন শুরু করবেন। কিন্তু হয়তো দেখা যাবে সবার পরে প্রস্তুতি শুরু সেই সাকিব আবার বল আর ব্যাট হাতে দুরন্ত-দূর্বার। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আবার অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরাবেন টিম বাংলাদেশকে।

এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ