মাত্র দু’দিন পরই মুসলামদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আযহা। দেশের অন্যান্য জেলার মতো সুনামগঞ্জেও বসেছে কোরবানির পশুর হাট। কিন্ত গেল কয়েকদিন বাজারে বন্যার প্রভাব কিছুটা পড়লেও শুক্রবার জমে উঠতে শুরু করেছে পশুর হাটগুলো।
Advertisement
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সুনামগঞ্জে এ বছর অস্থায়ী বাজার বসেছে ৩২টি। যার মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৪টি, বিশ্বম্ভরপুর বাজারে ৫টি, ছাতকে ৩টি, শাল্লায় একটি, দিরাই উপজেলায় একটি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৪টি এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪টি।
এ ছাড়া প্রতি বছরের মতো এবারও সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, তাহিরপুরের বাদাঘাট বাজার, জামালগঞ্জের মান্নারগাঁও, দোয়ারাজার উপজেলার আমবাড়ি বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গরুর বড় হাট বসেছে।
সরেজমিনে সুনামগঞ্জের সদর উপজেলা বালাকান্দা বাজার, দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি বাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাঘবেড় বাজার পশুর হাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, তুলনামূলক বেশি দেশি গরু উঠলেও বাজারে রয়েছে ভারতীয় গরু। প্রতিটি গরুর দাম আকার অনুযায়ী ভিন্ন। বড় গরুগুলো ৮০ থেকে ১ লাখ ও মাঝারি আকারের গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ হাজার টাকার মধ্যে। বাজারে গরু বেচাকেনা ভালো হলেও ক্রেতাদের দাবি দাম বেশি।
Advertisement
বাজারে ভারতীয় গরু আসায় দেশি গরুর দাম কমে গেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি, সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সহজেই সুনামগঞ্জে চলে আসছে ভারতীয় গরু। ক্রেতা সংকটে গরু বিক্রি করতে পারবেন কি না- শেষ পর্যন্ত সেই চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। তার ওপর বাজারে গরু নিয়ে আসার পথে চাঁদাও দিতে হচ্ছে।
দোয়ারাবাজার আমবাড়ি বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী মালেক মিয়া বলেন, ‘গরু বাজারে আনছি চারটা। একটা বিক্রি করছি। এমনে মানুষ আয় ঠিকই কিন্তু গরু দেখে দাম জিগায় পরে যায়গি। দিনে দিনে ভারতের গরু বাজারে আইয়া আমরার দেশি গরুর চাহিদা অনেকটা কমে গেছে।’
বিশ্বম্ভরপুরে বাগবেড় বাজার পশুর হাটের ব্যবসায়ী করিম আলী বলেন, ‘দাম বেশি না। প্রতি বছর গরু কেনা তার পরিচর্যা করা এগুলার খরচ ধরলে যা হয় তাই দাম রাকি। তাছাড়া বড় বড় মানুষরেও রাস্তাঘাটে টাকা দেয়া লাগে। আর খাবারের দামও দিন দিন হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে-তাই সবমিলিয়ে দাম ঠিকই আছে।’
বাজারে গরু কিনতে আসা যুবক জনি চৌধুরী বলেন, ‘এখন বাজারে আসছি গরু কিনতে। ছোটখাটো একটি বাজেট রয়েছে। যদি গরু পছন্দ হয় এবং সাধ্যের মধ্যে হয়ে যায় তাহলে ওই গরুটাই কিনে ফেলব। বাবা অসুস্থ হওয়ায় উনি আসতে পারেননি, তাই আমি এবার প্রথম গরু কিনতে আসছি।’
Advertisement
গরু কিনতে আসা কবির আহমদ বলেন, ‘গরুর দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি। ছোট ছোট গরুর দাম চাচ্ছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। বেশি দাম হলে গরু না কিনে ছাগল কিনব। দেখি ঈদেরতো আরও কয়েকদিন আছে।’
বাজারে নিরাপত্তার বিষয়ে অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মাহাবুর রহমান বলেন, ‘সুনামগঞ্জের বড় বাজারগুলোতে পুলিশ রয়েছে। জালনোট ধরার মেশিনও বাজারগুলোতে রয়েছে। বৃহস্পতিবার ১ জনকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার জাল নোটসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বাজারে আমাদের সাদা পোশাকে ও গোয়েন্দারা রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন নিশ্চিন্তে বেচাকেনা করতে পারেন সেজন্য পুলিশ সব সময় তাদের পাশে রয়েছে।’
বিজিবি-২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাকসুদুল আলম বলেন, ‘ভারতীয় গরু আসা বন্ধে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমি দুই রকমের ফোর্স সীমান্তে রেখেছি। যারা দিনে ও রাতে সজাগ থেকে পাহারা দিচ্ছে। আমরা অনেকগুলো ভারতীয় গরুও আটক করেছি।’
মোসাইদ রাহাত/এনডিএস/এমকেএইচ