জাতীয়

কমলাপুরে জনস্রোত, উত্তরের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

ইট- পাথর আর কংক্রিটের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। ঈদের আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে পড়তে হয়েছে নানা বিড়ম্বনায়। টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঘরে ফেরা মানুষদের। শিডিউল বিপর্যয়, যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ, আসন না পাওয়ার ভোগান্তি মেনে নিয়েই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেকড়ের টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

Advertisement

গত ৩১ জুলাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যারা ৯ আগস্টের টিকিটি সংগ্রহ করেছিলেন তারাই আজ কমলাপুর স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরছেন

শুক্রবার (৯ আগস্ট) কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের কোথাও ফাঁকা নেই, সবদিকে যাত্রী আর যাত্রী। ঈদ উদযাপনে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনে বাড়ি ফিরতে কমলাপুরে এসেছেন তারা। নির্ধারিত সময়ের অনেক ট্রেন এখনও কমলাপুরে পৌঁছায়নি। আর যেসব ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে সেসব ট্রেনের ভেতরে ও ছাদে পা ফেলানোর জায়গা ছিল না। যাত্রীতে ঠাসাঠাসি বেশিরভাগ ট্রেন। এরমধ্যেই আবার অপেক্ষমান আরও যাত্রীর সর্বোচ্চ চেষ্টা সেই ট্রেনে ওঠার। জানালার স্ট্যান্ডে কেউ পা দিয়ে ট্রেনের ছাদে ওঠার চেষ্টা করছেন, কেউবা পরিবারের অন্য সদস্যদের জানালা দিয়ে ট্রেনের ভিতরে পাঠাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ট্রেনগুলোর ভেতরে তীল ধারণের ঠাঁই নেই। সব মিলিয়ে ঘরমুখো সব মানুষের জনস্রোত যেন মিলছে এসে কমলাপুরে।

উত্তরের সব ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়

Advertisement

শুক্রবার ভোর ৬টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও স্টেশনে এসে পৌঁছায় সকাল সোয়া ১০টার পরে। ট্রেনটির সম্ভব্য ছাড়ার সময় দেয়া হয়েছে ১০টা ৪০ মিনিট। চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও এ ট্রেনটির ছাড়ার সম্ভব্য সময় দেয়া হয়েছে সকাল সাড়ে ১০টা। রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত স্টেশনেই এস পৌঁছায়নি। দিনাজপুর- পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টায় কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সম্ভব্য ছাড়ার সময় ১১টা ১০ মিনিট দেয়া হয়েছে।

নির্ধারিত সময় সকাল ৬টার রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১০টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায়। মুহূর্তেই পুরো ট্রেন যাত্রীতে ঠাসাঠাসি হয়ে পড়ে। যেন পা ফেলারও জায়গাটুকুও নেই। ট্রেনটি বিলম্বে আসার কারণে আগে থেকেই প্ল্যাটর্ফমে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে বিলম্বে পৌঁছানোর পরই যাত্রীদের হুড়োহুড়ি। মানুষের ভিড় ঠেলে তখন সবার ট্রেনে ওঠার চেষ্টা। নিমিষেই ট্রেনটি পূর্ণ হয়ে যায়। কেউবা ভিড় ঠেলে গেট দিয়ে ভেতরে উঠছেন, যারা সেটা পারেননি তাদের কেউবা জানালা দিয়ে প্রথমে ব্যাগ, পরে পরিবারের সদস্যদের ট্রেনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, এরপর নিজেও উঠছেন ওই জানালা দিয়েই। মুহূর্তেই যেন ট্রেনটি যাত্রীতে গাদাগাদি হয়ে যায়। যেন তিল ধরণে ঠাঁই নেই। এত গেল ট্রেনের ভেতরের দৃশ্য, ট্রেনের ছাদও ফাঁকা নেই। পুরো ট্রেনের ছাদ জুড়ে মানুষ আর মানুষ।

ভোগান্তি-বিড়াম্বনার ক্ষোভ ঝাড়ছেন যাত্রীরা

রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী শিহাবুল ইসলাম। টিকিট অনুযায়ী তার ট্রেন সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছেছে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী ও দুই সন্তান। তাদের সঙ্গে নিয়ে এ ভোগান্তির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

Advertisement

শিহাবুল বলেন, প্রতিবছর ঈদে বাড়ি ফিরতে অতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। আজকের টিকিটের জন্য নির্দিষ্ট দিনে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছিলাম। আজ যখন যাবো তখন আবার ট্রেন বিলম্ব। প্ল্যাটফর্মে অসংখ্য যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। সোয়া ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন এসে পৌঁছালে সবাই ঠেলাঠেলি করে ট্রেনে উঠছে, ট্রেনে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এত কষ্ট করে টিকিট সংগ্রহ এরপর আবার ট্রেন সাড়ে ৪ ঘণ্টা লেট, এখন ট্রেনে এত্ত ভিড় যে স্ত্রী সন্তান নিয়ে নির্দিষ্ট আসন পর্যন্ত হয়তবা পৌঁছাতেই পারবো না। প্রতিবছর ঈদের সময় যাত্রীদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এর কোনো সমাধান বের করতে পারে না বিষয়টি আসলেই খুবই দুঃখজনক।

নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী এরশাদ আলী বলেন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে মানুষ ঘরে ফিরে। সড়কে যানজট, খানাখন্দ, যে কারণে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। টিকিট পাওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে কাউন্টারের লাইনে। আর যাত্রা পথে ট্রেনের ভেতরে থাকবে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ। সকাল ৮টায় ট্রেনটি ছাড়ার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছাতে পারেনি। ঈদের সময় মানুষের এত বিড়াম্বিনা ভোগান্তি নিরসনে কোনোবারই সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আর আমাদের মতো অসহায় যাত্রীদের এভাবেই ভোগান্তিকে সঙ্গী করে বাড়ি ফিরতে হয়।

যা বলছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ

স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিনই আমরা ধারণা করেছিলাম ৯ আগস্ট যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় হবে। এরমধ্যেই আমরা চেষ্টা করছি সিডিউল ঠিক রাখতে। তারপরও কয়েকটা ট্রেনের বিলম্ব হয়েছে।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাওয়া আসার সময় প্রতিটি স্টেশনে উঠা নামা করতে যেখানে দুই মিনিট অপেক্ষা করার কথা সেখানে ৫/১০ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ কারণে ট্রেনগুলো পৌঁছাতেও কিছুটা দেরি করছে। তবে চেষ্টা করছি যেন সঠিক সময়েই সব ট্রেন ছেড়ে যায়। যে ট্রেনগুলো কমলাপুর পৌঁছাতে দেরি করছে, সেই ট্রেনগুলোই ছেড়ে যেতেও দেরি করছে। ঈদ যাত্রায় আমরা চেষ্টা করছি যেন সব ট্রেনই ঠিকমতো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঈদে বাড়ি ফিরতে পারে সে জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। যাত্রী চাপ সামলাতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এএস/এএইচ/এমএস