ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে কুড়িগ্রামে ততই জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। ভারতীয় গরু আসায় স্থানীয় গরুর চাহিদা কমে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোরবানির হাটগুলোতে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে চালানের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল।
Advertisement
জেলার সীমান্তবর্তী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরু ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদ ঘনিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত কোরবানির জন্য পছন্দের গরু কিনতে আসছেন না ক্রেতারা। দেশি এবং বাইরের পাইকারদের কারণে বেড়ে গেছে কোরবানির পশুর দাম। বেশির ভাগ খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনে নিচ্ছে পাইকাররা।
এছাড়া হাটগুলোতে এক পাইকার থেকে আরেক পাইকারের কাছে হাতবদল হচ্ছে গরু। ফলে মূল্য হয়ে যাচ্ছে চড়া। অপরদিকে অনেকেই কোরবানির পশু ক্রয় করলেও ক্রেতা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে অনেকটাই বাধ্যতামূলক কিংবা জোরপূর্বক চালান আদায় করছেন ইজারাদাররা। একদিকে চড়া দাম অপরদিকে চালানের খরচ নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
স্থানীয় গরু বিক্রেতাদের অভিযোগ, ভারতীয় গরু এবং বন্যার কারণে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। হাটগুলোতে প্রশাসনের নজরদারির অভাবে স্থানীয় দালাল চক্রের উৎপাতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফলে এবারের গরু বিক্রি লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা।
Advertisement
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে গরু-মহিষ প্রতি ১৮০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়া ৮০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া চালান ফি আদায় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।
খামারি ছামাদ ও তাইজুল জানান, প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করে হাটে গরু নিয়ে আসছি। গরুর পেছনে অনেক খরচ হয়েছে। ফলে দামও একটু বেশি। কিন্তু সে তুলনায় দাম হাঁকছে না। আমাদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। তবে ভারতীয় গরু না আসায় আমরা খুশি।
ভিতরবন্দ হাই স্কুল মাঠে গরু বিক্রেতা আমজাদ ও কাশেম ব্যাপারী বলেন, গরু বিক্রি করতে এসেছি। কিন্তু হাটে ঢুকেই গরুর খুঁটি বাঁধতে ১০০ টাকা এবং চালান দিতে হয়েছে ৩০০ টাকা। সরকারি ফি কত এটা আমাদের জানা নেই। কোনো চার্ট নেই, তাই বলতে পারি না।
একইভাবে ছাগল বিক্রেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, আমি একটা ছাগল বিক্রি করেছি ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। এর চালান দিতে হয়েছে ২০০ টাকা।
Advertisement
ভিতরবন্দ হাটে কোরবানি পশু কিনতে আসা ক্রেতা আসাদুল, মজিবর, সালাম ও আকবর বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারে পশুর দাম কিছুটা বেশি। হাটে প্রতি গরুর জন্য ৪০০ টাকা আর ছাগলের জন্য ২৫০-৩০০ টাকা করে চালান নিচ্ছে ইজারাদাররা। এখানে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ভিতরবন্দ হাটে ইজারাদারের প্রতিনিধি রিপন বলেন, পশু চালানের সরকারি ফি কত আমার জানা নেই। তবে এখানে হাজারে ১০০ টাকা করে নেয়া হয়।
যাত্রাপুর হাটে টাকা উত্তোলনকারী আব্দুর রহিম বলেন, বন্যার প্রভাব গরুর হাটেও পড়েছে। এখানে ভারতীয় গরু না থাকলেও দেশি গরুর আমদানি বেশি। কিন্তু সে তুলনায় ক্রেতা কম। চালান বেশি নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ খুশি হয়ে যা দেয় তাই নেয়া হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার বলেন, এবার জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি দেশি গরুর মজুত আছে। এতে করে দেশি খামারিরা লাভবান হবেন। জেলায় এবার কোরবানির জন্য দেড় লাখ দেশি গরু মজুত আছে।
নাজমুল/এএম/এমকেএইচ