দীর্ঘ দুই মাসেরও অধিক স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকলেও স্বামীর বিরুদ্ধে খুন ও মরদেহ গুমের অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। মিথ্যা মামলার ক্ষোভ ও অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন স্বামী সাইফুল ইসলাম।
Advertisement
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়। এ ঘটনায় স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর স্ত্রী সীমা আক্তার বলেছেন স্বামীর নির্যাতনে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।
এ বিষয়ে বুধবার (৭ আগস্ট) কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন সীমা আক্তার। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের নাল্লা গ্রামের মোরশেদ মিয়ার মেয়ে সীমা আক্তারের সঙ্গে চার বছর আগে একই উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়া সদরের আটকিল্লাপাড়ার সহিদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল।
Advertisement
গত ১৮ মে থেকে সীমা আক্তার হঠাৎ নিখোঁজ হন। এ নিয়ে গত ২৩ মে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে সীমা আক্তারের মা হেলেনা বেগম বাদী হয়ে সীমার স্বামীর বিরুদ্ধে খুন ও মরদেহ গুমের মামলা করেন।
ওই মামলার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন সাইফুল। এরই মধ্যে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সাইফুল ও সীমা আক্তারের পরিবারের লোকজন একাধিকবার বৈঠক করেন। একটি বৈঠকে সাইফুলকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানার টাকা দিতে পারেননি সাইফুল।
একদিকে স্ত্রী উধাও, অন্যদিকে হত্যা ও গুমের মামলা। এসব চিন্তায় ২১ জুলাই সাইফুল ইসলাম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা বাদী হয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন।
এদিকে, সীমা আক্তার স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে খুঁজে বের করতে অভিযান চালায় পুলিশ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর থেকে তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
Advertisement
বুধবার কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন সীমা। জবানবন্দিতে সীমা বলেন, স্বামী আমাকে নির্যাতন করতো। তাই কাউকে কিছু না বলে গাজীপুরে গিয়ে কারখানায় চাকরি নিই। আমি খুন হইনি আর কেউ আমাকে গুম করেনি। মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে আসলে আমাকে আটক করে পুলিশ।
নিহত সাইফুল ইসলামের ভাই রাজিব মিয়া ও শ্যামল মিয়া বলেন, আমাদের বড় ভাই সাইফুলের সঙ্গে স্ত্রীর কলহ চলছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার ভাইকে অন্যায়ভাবে ফাঁসাতে খুন ও গুমের মামলা করেন। তাই অভিমান ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছেন ভাই। সাইফুলের মৃত্যুর জন্য সীমার পরিবার দায়ী।
ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের এসআই মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সীমা আক্তারকে খুন করে মরদেহ গুমের অভিযোগ এনে তার মা হেলেনা আক্তার বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। দুই পরিবারের মধ্যে মামলাটি মীমাংসার জন্য বৈঠক হয়েছিল। দুই লাখ টাকা সাইফুল দিলে মামলা তুলে নেবে বলেছিল সীমার পরিবার। কিন্তু সাইফুল টাকা দিতে পারেননি। পরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। জীবিত সীমা আক্তারকে আদালতে নিয়ে গেলে তিনি বলেন, স্বামীর নির্যাতনের কারণে বাড়ি থেকে স্বেচ্ছায় বের হয়ে গাজীপুরে গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছেন।
মো. কামাল উদ্দিন/এএম/এমকেএইচ