বাংলাদেশের পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প নিয়ে ভারতের কোনো সমস্যা নেই। উপরন্তু এ বিষয়ে যৌথ সমীক্ষা করতে দুদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
Advertisement
আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানানো হয়। দীর্ঘ আট বছর পর ঢাকায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার ও ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
নতুন কমিটি প্রসঙ্গে সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ২০১৬ সালে দুই দেশের মধ্যে এমন একটি কমিটি হয়েছিল। তা বাতিল করে নতুন কমিটি করা হয়েছে।
Advertisement
ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বলেন, বাংলাদেশের পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প নিয়ে ভারতের কোনো সমস্যা নেই। তবে দুই দেশই এ প্রকল্প থেকে কীভাবে লাভবান হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, একটি কমিটি হয়েছে, যেখানে দুই দেশের দুইজন করে চারজন থাকবে। তারা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবে।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ঢাকার ছয়টি প্রস্তাব ও ভারতের চারটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলো হলো-গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে যৌথভাবে সমীক্ষা ও বাংলাদেশে গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ নির্মাণে ভারতীয় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা; অন্যান্য অভিন্ন নদী যেমন—মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানিবণ্টন চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন; সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের ইনটেক চ্যানেলের (রহিমপুর খাল) অবশিষ্ট অংশের খনন কাজ বাস্তবায়ন; বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা সম্প্রসারণ; বাংলাদেশের আখাউড়ায় সিঅ্যান্ডবি খাল ও জাজি নদীতে দূষণ; এবং আন্তঃসীমান্ত নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা।
Advertisement
দিল্লির প্রস্তাব প্রসঙ্গে সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বলেন, “এক্ষেত্রে নয়াদিল্লির প্রস্তাব হচ্ছে— মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা বা জলঢাকা এবং দুধকুমার বা তরসা ছয়টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টন; পশ্চিম বাংলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই, পুনর্ভবা ও টাংগন নদীতে শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ কমে যাওয়া; বাংলাদেশের চিনিকল থেকে নির্গত তরল বর্জ্য দ্বারা পশ্চিম বাংলার মাথাভাঙ্গা-চূর্ণী নদী দূষণ; এবং ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের মাধ্যমে ত্রিপুরার সাবরুম শহরে ‘ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই স্কি’ বাস্তবায়ন।”
উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বলেন, অনেকদিন পর এ বৈঠক হচ্ছে, এটা আশার কথা। দুই দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বৈঠকটি হতে যদিও দেরি হয়েছে, তবে এখন যাত্রা শুরু হলো।
পানি এখন বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে ভারতের পানিসম্পদ সচিব বলেন, এ উপমহাদেশে বিশ্বের মাত্র ৪ শতাংশ পানি আছে কিন্তু মানুষ আছে ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে, জলবায়ু বদলে গেছে। বৃষ্টিপাত কমেনি। মাত্র ২-৩ মাসে সব বৃষ্টি হচ্ছে। তাই পানি ব্যবস্থাপনা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। ভারত পানিশক্তি অভিযান ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।‘
‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোনো বড় পানি সমস্যা নেই। ৫৪টি নদীর কথা বলা হলেও ফেনি নদী গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ নদীর ডাটা কালেকশন সঠিকভাবে হচ্ছে না। তবে এখানে সাতটি নদীই গুরুত্বপূর্ণ। গঙ্গা-পদ্মা ব্যারেজ নির্মাণে ভারতে ইস্যু নেই। তবে এখানে কীভাবে দুই দেশের সবচেয়ে লাভ হবে সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে’-যোগ করেন উপেন্দ্র প্রসাদ সিং।
জেপি/এসআর/পিআর