জাতীয়

আগে কাদা-পানি লাগান, তারপরই মিলবে পশুর হাট

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে যে কয়টি অস্থায়ী পশুর হাট বসে তার মধ্যে আফতাবনগর উল্লেখযোগ্য। রামপুরা ব্রিজ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে হাটটি বসেছে। আফতাননগর গেট দিয়ে ঢুকে অস্থায়ী এ পশুর হাটে যেতে হলে অন্তত চারটি স্থানের কাদা-পানি পাড়ি দিয়ে যেতে হবে। এক কথায় হাটে পৌঁছানোর আগেই পড়তে হবে ভোগান্তিতে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার এক পাশে খোঁড়াখুঁড়ি করায় আফতাবনগর পশুর হাটে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে একটি রাস্তাই ব্যবহার করতে হচ্ছে। গেট দিয়ে প্রবেশ করে কিছু দূর যেতেই রাস্তায় কাদা-পানি জমে থাকতে দেখা যায়। সেই কাদা-পানির মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে গরুর ট্রাক।

প্রায় ৬ ফুটের মতো জায়গাজুড়ে থাকা এ কাদা-পানি পাড়ি দিয়ে কিছু দূর এগোলেই আবারও পড়তে হবে কাদা-পানির মধ্যে। একইভাবে যেখানে গরু-ছাগলের হাট বসেছে সেখানে যেতে অন্তত আরও দুটি স্থানে জমে থাকা কাদা-পানি পাড়ি দিতে হবে।

কাদা-পানি জমে থাকা প্রথম স্থানটি পার হয়ে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের কথা হয় পিকআপ ভ্যানচালক মাহফুজের সঙ্গে। ভাই গরু-ছাগলের হাট কোথায়- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সামনে সোজা যেতে থাকেন। আরও কয়েকটি স্থানের কাদা-পানি পার হন, তারপর হাট পাবেন। হাটে যেতে হলে কাদা-পানিতে একটু গড়াগড়ি খেতেই হবে।’

Advertisement

রাস্তার এ অবস্থা কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তার ওই পারে দেখেন কীভাবে খোঁড়া। ওইদিকে খোঁড়ার কারণে এদিকের রাস্তাও নষ্ট হয়ে গেছে। আর রাস্তায় অল্প কাদা-পানি জমে থাকা অবস্থায়, তার ওপর দিয়ে একের পর এক ট্রাক গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে- এটাই স্বাভাবিক। এখন যদি আবার বৃষ্টি হয়, তাহলে রাস্তার অবস্থা করুণ হয়ে যাবে।’

হাটে যাওয়ার আগেই রাস্তায় এমন কাদা-পানি জমে থাকায় বিরক্ত পশু ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগে হাটের রাস্তায় এমন কাদা-পানি জমে থাকতো না। কিন্তু এবার রাস্তায় যেভাবে কাদা-পানি জমেছে তা ব্যবসায় মন্দাভাব ফেলতে পারে।

এদিকে গরু-ছাগলের দামের বিষয়ে হাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বাড়তি। গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই আকারের গরু ৭০ হাজার টাকা চাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার গরুর দাম বাড়তি বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের। তবে ছাগলের দাম অনেকটা আগের বছরের মতোই।

ঝিনাইদহ থেকে গরু নিয়ে আসা আজগর বলেন, ‘গত বছরও এ হাটে গরু নিয়ে এসেছিলাম। বিক্রি বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু এবার হাটের রাস্তা তো খুব খারাপ। রাস্তার এ অবস্থা হলে মানুষ আসবে কি করে? রাস্তায় কাদা-পানি জমে থাকায় আমরা বেশ চিন্তায় আছি। গতকাল এখানে এসেছি, এখনও একটি গরুও বিক্রি হয়নি।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘এবার গরুর দাম একটু বেশি। কারণ মাংসের দাম বেড়ে গেছে। আমরা যে গরু নিয়ে এসেছি এর মধ্যে কিছু নিজস্ব গাভির, কিছু কেনা। সব থেকে ছোটটার দাম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২ লাখ ২০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের গরুও আমাদের কাছে আছে। গত বছর যে গরু ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি, এবার সেই আকারের গরু আড়াই লাখ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব নয়।’

কামাল নামে আরেক গরু ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার গরুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার তার দাম ৭০ হাজার টাকা। গরুর দাম বেশি হওয়ায় ছোট গরুর দিকেই ঝোঁক বেশি ক্রেতাদের। এখন পর্যন্ত আমরা দুটি গরু বিক্রি করেছি। একটি ৬৮ হাজার টাকা, আরেকটি ৭৫ হাজার টাকা।’

হারুন নামে ছাগলের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কাদার মধ্য দিয়ে ছাগল টানতে টানতে এখানে নিয়ে এসেছি। হাটের ভেতরটা রাস্তার মতো খারাপ নয়। কিন্তু রাস্তার অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আকাশও মেঘলা। এ পরিস্থিতিতে বৃষ্টি হলে অবস্থা তো আরও খারাপ হবে।’

ছাগলের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার ছাগলের দাম বাড়েনি। অনেকটা গত বছরের দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গত বছরের চেয়েও দাম কম। গত বছর যে ছাগল ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এবার সে আকারের ছাগলের দামই চাচ্ছি ২৫ হাজার টাকা। দরকষাকষির মাধ্যমে আরও কম দামে বিক্রি করতে হবে।’

এমএএস/এনডিএস/পিআর