জাতীয়

দিনভর বৃষ্টির বাগড়া : জমে ওঠেনি গাবতলী পশুর হাট

১২ আগস্ট (সোমবার) ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এই ২৩টির বাইরে রাজধানীর স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতেও এবার প্রচুর দেশীয় গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতা সমাগম এখনো তেমন নেই। এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাট। অন্যদিকে সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবহাওয়া খারাপের কারণে ক্রেতা সমাগম কম। এছাড়া আজ (বৃহস্পতিবার) শেষ কর্মদিবস। আবহাওয়া ভালো হলে জমে ওঠবে পশু বেচাকেনা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু, ছাগল, মহিষ নিয়ে ব্যবসায়ীরা হাটে এসেছেন। ক্রয়ের উদ্দেশে ক্রেতা না থাকলেও অনেককে দাম-দর করতে দেখা যায়। তবে বিক্রির আগ্রহ নিয়েই বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ক্রেতা কম থাকলেও দু-একটি গরু বিক্রিও হচ্ছে।

গাবতলী পশুর হাটে ঢুকতেই কথা হয় কুষ্টিয়া মেহেরপুর এলাকা থেকে আসা মুঞ্জুরুল ইসলাম খামারির রাখাল রিপনের সাথে। িতিনি বলেন, তিনটা গরু এনেছি। নাম দেয়া হয়েছে কালো পাহাড়, লাল পাহাড় ও সাদা পাহাড়। তিনটির দাম হাঁকানো হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। লাল পাহাড় ৮ লাখ, কালো পাহাড় ১৫ লাখ ও সাদা পাহাড় ১২ লাখ টাকা। তবে এখনো বিক্রি করার মতো দাম-দর কোনো ক্রেতা করেননি।

Advertisement

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার খামারি খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার তিনটি গরুর মধ্যে সবচেয়ে দাম বেশি ‘কালো মানিক’র। দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। ক্রেতা ১৮ লাখ পর্যন্ত দাম বলেছেন। তবে আরও সময় নিচ্ছি। আরেকটির নাম ‘টনিরাজ’, দাম ২৫ লাখ। এটার দাম এখনো কেউ করেনি।’

কুষ্টিয়া কুমারখালীর গরু ব্যবসায়ী রিস্তাক বলেন, আমার নিজের ঘরে পালিত তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। এবার কোরবানি ও ১৫ আগস্ট পাশাপাশি। কোরবানিতে পশু তো বিক্রি হবেই। সাথে ১৫ আগস্ট অনেক গরু জবাই হয়। সে জন্য এবার বাজার (দাম) পাওয়ার আশা থাকছে। তবে বর্ডারের (ভারতীয়) গরু বড় ফ্যাক্টর। বর্ডারের গরু না এলে লাভের আশা বেশি থাকে।

হাটের ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিলল জটলার। ৯০ হাজারে একটি মাঝারি সাইজের গরু কিনে পাইকপাড়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমান ঘরে ফিরছেন। কত দামে কিনেছেন তা জানতেই অনেকের ভিড়। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও পোশাক ব্যবসায়ী। নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকব বলে আগেভাগেই গরুটি কেনা।’

এর মধ্যে দুপুর ১টার দিকে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে গরু রাখার স্থানগুলোতে। এ সময় বালি ফেলে পানি নিষ্কাশন করেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

কেরানীগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে হাটে আসা মেছের আলী বলেন, গাবতলীতে কোরবানির পশু বিক্রি যেমন বেশি তেমনি বিড়ম্বনাও আছে। যেমন এবার যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে ওপরের শেড কিংবা ত্রিপল কোনো কাজে আসছে না। গরুও ভিজছে, মানুষও ভিজছে। এভাবে চলতে থাকলে গরু নিয়ে আরও তিনদিন (ঈদের আগের দিন পর্যন্ত) কাটানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের ইজারা কর্মকর্তা সানাউল হক জানান, আমাদের এখানে (পশুর হাটে) ব্যবসায়ীদের জন্য খুপড়ি ঘর, গরু রাখার স্থান তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টি বাগড়ায় যেন রাখাল ও পশু না ভিজে সে জন্য শেড টাঙানো হয়েছে। অনেকে নিজ উদ্যোগে প্লাস্টিকের ত্রিপল লাগিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, শতাধিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। পশু বিক্রির সাথে সাথে যেন হাসিল আদায় করা হয় সে জন্য হাসিল ঘর তৈরি করা হয়েছে। মনিটরিংয়ের জন্য আলাদা ১০টি বুথ করা হয়েছে। আশা করছি সমস্যা হবে না।

গাবতলী পশুর হাটের সামনে বসানো হয়েছে র‌্যাব ও পুলিশের কন্ট্রোল রুম। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে দারুস সালাম থানার এসআই আশরাফ আলী বলেন, পশুর হাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ছয় থানা মিলে কমপক্ষে আড়াইশ পুলিশ সদস্য হাট এবং এর আশপাশ এলাকায় মোতায়েন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে চারদিকে মনিটরিং করা হচ্ছে। জাল টাকা খতিয়ে দেখতে চারটি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। মানি স্কটের জন্য পুলিশের সহযোগিতা নিতে অনুরোধ করে মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে জেলায় জেলায় ও হাটে হাটে লেনদেন করতে বলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হাটকেন্দ্রিক কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেনি।

জেইউ/আরএস/পিআর