কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যশোরের শার্শা-বেনাপোলে খামারিরা গরু-ছাগল ও ভেড়া মিলে প্রায় ৪০ হাজার কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব পশু সরবরাহ করা হবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলায় এক হাজার ৫০৪ জন খামারি গরু লালন-পালন করছেন।
Advertisement
ভারতীয় গরু না আসায় দেশি পশুর চাহিদা বেড়েছে উল্লেখ করে খামারিরা বলেন, এবার লাভবান হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এসব গরু বিগত কয়েক বছর এ অঞ্চলের কোরবানির চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। তবে এবার সীমান্তপথে ভারতীয় গরু না আসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার সুযোগ নেই।
যশোরের বেনাপোল ও শার্শা সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে গরু আসা কমে যাওয়ায় অনেক আগে থেকে এ অঞ্চলের বেশ কিছু বেকার যুবক দেশি প্রযুক্তিতে উন্নতজাতের গরুর খামার তৈরি করে লাভবান হচ্ছেন।
এবাবের কোরবানির ঈদে বিক্রি করার জন্য শার্শা উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় এক হাজার ৫০৪টি গরু মোটাতাজাকরণ খামারে সরকারি হিসেবে চার হাজার ৭৮৫টি গরু ও সাত হাজার ৯৯১টি ছাগল-ভেড়া থাকলেও বেসরকারি হিসেবে গরু রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। আর ছাগল ভেড়া আছে ১০ হাজারের ওপরে।
Advertisement
এছাড়া অন্যান্য কৃষকের খামারে রয়েছে অসংখ্য গরু। খামার মালিকদের নিবিড় পরিচর্যায় এসব খামারের গরুগুলো অত্যন্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয়। খামার মালিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে এসব গরু পরিচর্যা করছেন।
গত বছর যেসব গরু ৭০-৮০ হাজার টাকায় কিনেছেন সেসব গরু এবার দুই লাখ টাকা দামে বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন খামারিরা। ইতোমধ্যে এসব গরু হাটে তোলা শুরু করেছেন তারা। অনেক খামারি বাড়িতে বসেই গরু বিক্রি করেছেন।
যশোরের শার্শা সীমান্তপথে ভারত থেকে এ বছর গরু না আসায় এখন পর্যন্ত বাজারে গরুর দাম ভালো আছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোলের পুটখালী এলাকার খামারি নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, গরুর হাটে দেশের অন্যান্য এলাকার ব্যাপারী কম থাকায় বিক্রি কম হচ্ছে। উপজেলায় এবারের কোরবানিতে যে পরিমাণ গরু লাগবে তার দ্বিগুণ গরু রয়েছে খামারে।
Advertisement
খামারি জালাল উদ্দিন ও পারভীন সুলতানা বলেন, দেশি গরু পালন করে ভালো আছি আমরা। চাহিদা এবং দামও ভালো পাই। এন্টিবায়োটিক ছাড়াই দেশি গরু পালন করি। এতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি আমরা।
শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জয়দেব কুমার সিংহ বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শার্শা উপজেলায় দেড় হাজারের অধিক গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এসব খামারিরা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে কুষ্টিয়া, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারদের কাছে গরু বিক্রি করেন। অনেক ক্রেতা খামার থেকেও কোরবানির পশু কিনে নিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, পুষ্টিকর খাদ্য খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণে খামারিদের মাঝে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভারত থেকে গরু না আসায় এলাকায় খামার বৃদ্ধি পাবে ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। গরুর খামার ব্যবসায়ীরা বিনাসুদে লোন পেলে এই পেশায় আসতে উৎসাহিত হবেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন, গত বছর কোরবানি ঈদের আগে থেকে সীমান্তপথে গরু ঢোকা বন্ধ ছিল। কিন্তু ঈদের বাজারের শেষ দিকে ভারতীয় গরু ঢুকে বাজারে প্রভাব ফেলেছিল। এমনকি, দেশের লাখো খামারি গরু বিক্রি করতে পারেনি। এতে খামারিরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। ভারতীয় গরু না আসায় দেশি গরুর প্রতি দৃষ্টি এখন ক্রেতাদের। প্রতিনিয়ত কোরবানির পশুর বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে।
খুলনা ২১ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, অন্যান্য সময় কোরবানি ঈদের আগে শার্শা সীমান্তপথে ভারতীয় গরু এলেও এবার ভারত থেকে গরু আসছে না। যেন বাংলাদেশিরা ভারতে প্রবেশ করে গরু আনতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। গরু পাচার নিয়ে সীমান্তে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না।
মো. জামাল হোসেন/এএম/এমকেএইচ