জাতীয়

আল্লাহ এদের ক্ষমা করবে না, মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে রোগী

রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে হাসপাতালটিতে আসা বেশিরভাগই বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অনিরাপদ অবস্থায় রেখে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা।

Advertisement

হাসপাতালের ভেতরেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা। তার মধ্যে জমে রয়েছে পানি। যেখান থেকে সহজেই ডেঙ্গু জন্ম নিতে পারে।

সরেজমিন হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, বেডের পাশাপাশি মেঝেতে রেখেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত এই রোগীদের হাতেগোনা কয়েকজনকে মশারি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই কোনো মশারি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন ও কার্ডিওলজিস্টের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে এডিস মশা কামড়ালে ওই মশাও ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্তদের মশারির মধ্যে রেখে চিকিৎসা না দিলে ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে।’

মুগদা হাসপাতালের কাউন্টারের একটি দৃশ্য। ছবি- বিপ্লব দিক্ষিত

তিনি বলেন, ‘রোগীর চাপের কারণে অনেক হাসপাতালে মেঝেতেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মেঝেতে মশারি ঝোলানোর ব্যবস্থা নেই, এ কারণে অনেকে মশারি ব্যবহার করছেন না। আবার কোনো কোনো রোগী নিজেরাই মশারি ব্যবহার করছেন না। তবে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মশারির মধ্যে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়াই উত্তম। হাসপাতালের মেঝেতে স্টান্ড ব্যবহার করে মশারি ঝোলানোর ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো।’

Advertisement

এদিকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ভেতরেই ময়লার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ময়লার দৃশ্য দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে এসব ময়লা এক-দুদিনের নয়, দিনের পর দিন এভাবে ময়লা পড়ে থাকছে হাসপাতালের ভেতরে। কাগজের টুকরোর পাশাপাশি পানির বোতল ও পলিথিন ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যেখানে জমে রয়েছে পানি।

এ বিষয়ে হাসপাতালটির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে হাসপাতালটির একজন নার্স জাগো নিউজকে বললেন, ‘ভাই, সত্যি কথা বললে নিজেদের বদনাম নিজেদেরই করতে হয়। এই হাসপাতাল বাইরে থেকে দেখতে ফিটফাট কিন্তু ভেতরে সদর ঘাট। হাসপাতালের ভেতরে ময়লা পড়ে থাকা সাধারণ ঘটনা। কিছুদিন আগেও ওয়ার্ডের বেডে বেডে একাধিক তেলাপোকা বিচরণ করত। রোগীদের দুর্ভোগ প্রতিদিনের ঘটনা। স্থানীয় কিছু ক্লিনিক থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীদের হয়রানিও করা হয়।’

হাসপাতালটির বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই কোনো মশারি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। ছবি- বিপ্লব দিক্ষিত

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা ফ্রি। এ কারণে গরিবরা ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে সরকারি হাসপাতালে ছুটে আসে। কিন্তু এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে থেকেও ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায় না। যে কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে পকেটের টাকা খরচ করে বাইরে থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছেন।’

অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মুগদা হাসপাতালে একশ্রেণির দালাল দৌরাত্ম্য চালাচ্ছে- এ বিষয়ে জাগো নিউজে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। কিন্তু এ দালাল ও অসাধু কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য এখনো বন্ধ হয়নি। মানিকনগর থেকে মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে আসা মো. আনিস নামের একজন বলেন, ‘দুদিন ধরে জ্বর। ডাক্তার ডেঙ্গুর পরীক্ষা দিয়েছে। তিন ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পরীক্ষা করাতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করাতে হবে।’

Advertisement

মুগদা হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। ছবি- বিপ্লব দিক্ষিত

তিনি বলেন, ‘যাদের ক্ষমতা আছে তারা ফ্রিতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারছেন। কিন্তু আমার মতো সাধারণ মানুষ ফ্রি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয়ায় সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা ফ্রি করা হয়েছে। সরকারপ্রধান আন্তরিক হলেও দেখেন এই হাসপাতালের কর্মকর্তাদের মন গলে না। এমন পরিস্থিতেও এরা টাকা কামানোর ধান্দায় মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। আল্লাহ এদের কোনো দিন ক্ষমা করবে না।’

এমএএস/এসআর/এমকেএইচ