ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট নামে পরিচিত মেহেরপুরের ছাগলের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। তাই কোরবানির ঈদ এলে প্রতিবছর এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ভিড় জমান মেহেরপুরের পশুহাটগুলোতে।
Advertisement
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এখানকার ছাগলের হাট। দামও নাগালের মধ্যে।
মেহেরপুরের সবচাইতে বড় ছাগলের হাট বারাদি। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর ছাগল আমদানি হয়েছে শতবর্ষী এই হাটে। ৪৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা দামের ছাগল পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাবসায়ীরা আসছেন এখানে। তাদের মাধ্যমে এ জেলার ছাগল চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
রঙ ও দেখতে ভাল হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের বেশ চাহিদা রয়েছে। আর এর চামড়ার সুনাম বিশ্বজুড়ে। তবে বড় ছাগলের তুলনায় মাঝারি ছাগলের চাহিদা এবার একটু বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
সপ্তাহের শনি ও বুধবার বসে মেহেরপুর সদরের বারাদি বাজারে অবস্থিত শতবর্ষী এই পশুহাট। তবে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সপ্তাহে তিনদিন বসছে হাটটি। আশে পাশের বেশ কয়েকটি জেলার সব চেয়ে বড় হাট হিসাবে বারাদি ছাগলের হাটের নামডাক রয়েছে। ছাগলের পাশাপাশি এখানে ভেড়াও কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম। কোরবানির উপলক্ষে একটি বড় আকারের ছাগল কেনার জন্য বারাদি হাট চষে বেড়িয়ে একটিকে পছন্দ করেছেন। ছাগলটি তিনি কিনেছেন ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে।
বুধবার ওই হাটে গিয়ে দেখা যায়, হরেকরমক আকার, রঙের দেশি ছাগল। ইজারাদর রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশি ছোট জাতের ছাগলের সংখ্যা ৭৫ শতাংশ। বাকি ১৫ শতাংশ ক্রস রাম ছাগল। আর ১০ শতাংশ ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল। গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির জন্য ছাগলের চাহিদা অনেকাংশে বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদরের কলাইডাঙ্গা গ্রামের ভূসিমাল ব্যবসায়ী তানজীরুল রহমান একটি দেশি জাতের খয়েরি রঙের ছাগল কিনেছেন ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে। তার ধারণা ছাগরটিতে ৫২ কেজি মাংস হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, বাড়ির বেশির ভাগ সদস্যের গরুর মাংসে অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে। সে কারণে ছাগল কোরবানি দেবেন। গত বছরের তুলনায় ছাগলের আমদানি বেড়েছে। তবে ছাগল বাড়ার পাশাপাশি দামও বেড়েছে কয়েক গুণ।
মেহেরপুর সদরের মামুনুর রহমান নিজের পোষা পাঁচটি ছাগল নিয়ে হাটে প্রচণ্ড রোদে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রেতার অপেক্ষায়। অনেকে আসছেন, ছাগল দেখছেন তবে আশানুরপ দাম না পাওয়ায় বেলা ১২টা পর্যন্ত একটি ছাগলও বিক্রি করতে পারেননি। তিনি বলেন, হাটের শেষ সময়ে ক্রেতা না পেলে ছাগল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেবেন।
হাটের পাশে মুদি ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন, তার বয়স প্রায় ৬০ বছর। তিনি জন্মানোর আগে থেকেই বারাদি পশুর হাটটি চলে আসছে। সঠিক কত সালে প্রথম হাট বসেছিল তা কেউ বলতে পারবেন না। অনেক আগে থেকে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ কুষ্টিয়ার অনেকে এখানে ছাগল নিয়ে আসেন। যত দিন যাচ্ছে হাটটি আরও জমজমাট হচ্ছে।
১১টি ছোটবড় ছাগল নিয়ে এসেছেন মুজিবনগর উপজেলার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। বুধবার ৮টি বিক্রি করতে পারলেও তিনি আশাবাদী বাকিগুলো আজই (বৃহস্পতিবার) বিক্রি হবে।
তিনি বলেন, ক্রেতাদের ৮৫ ভাগ ৯ থেকে ২৪ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির ছাগল কিনতে চান। কিন্তু সে দামের ছাগল কম উঠছে বাজারে।
এবার বারাদি হাটে গত বছরের তুলনায় ছাগল বিক্রির হাসিল বাড়ানো হয়েছে। গত বছর যে কোনো ছাগলের জন্য ২৫০ টাকা করে হাসিল আদায় করা হলেও এবার ওজন হিসেবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে ইজারাদার ইসরাফিল হোসেন বলেন, আমরা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া হাসিলই আদায় করছি। কোনো অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছি না।
এদিকে হাটে মেহেরপুর প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি চিকিৎসক দলকে সার্বক্ষণিক ছাগল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকেই ছাগল কেনার পরে সেটি রোগাক্রান্ত কি না তাদের কাছ থেকে তা পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন।
আসিফ ইকবাল/এমএমজেড/জেআইএম