দিন দুয়েকের মধ্যে রাতারাতি পাল্টে গেল ভারতে গুগল সার্চের ধারা। সবাইকে টপকে ভারত এখন জানতে চাইছে কাশ্মীরি মেয়ে এবং তাদের বিয়ে করার সুলুকসন্ধান। হাতের মুঠোফোনে ধর্ষকামের এই জোয়ারে সব থেকে এগিয়ে কেরালা। ১০০ শতাংশ সাক্ষর এই রাজ্য গত তিন দিনে এ দেশের মধ্যে গুগল সার্চিংয়ের যত বার ‘ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল’ সার্চ করেছেন তার মধ্যে প্রথমে স্থানে রয়েছে। কেরালার পরই দ্বিতীয় স্থানে আছে কর্নাটক। এই দুই রাজ্যের মানুষ পড়ি মরি খুঁজছেন কাশ্মীরি মেয়েদের বিয়ের সুলুকসন্ধান।
Advertisement
তার পরেই রয়েছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র এবং তেলেঙ্গনা। তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। সপ্তম ও অষ্টম স্থানে যথাক্রমে তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশ। ঝাড়খণ্ড ও উত্তরাখণ্ড থেকে সব থেকে বেশি গুগ্ল সার্চ এসেছে কাশ্মীরি মেয়েদের নিয়ে। সেই তালিকায় ১৬ নম্বর স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গ। তবে সার্বিক ভাবে বাংলার মানুষের সন্ধানের ৮৭ শতাংশ খুঁজছেন কাশ্মীরি মেয়েদের। তবে সার্বিক ভাবে বাংলার মানুষের সন্ধানের ৮৭ শতাংশ খুঁজছেন কাশ্মীরি মেয়েদের। ১৩ শতাংশ চায়, সাধারণভাবে কাশ্মীরি বিয়ে নিয়ে জানতে।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই গুগ্ল সার্চে সব কিছু ছাপিয়ে উপরে উঠে এসেছে কাশ্মীর, খুব স্পষ্ট করে বললে কাশ্মীরি মেয়ে। কিন্তু কাশ্মীরি কন্যাদের বাইরের রাজ্যে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল নাকি ? তথ্য বলছে, কোনও দিনই ছিল না। বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত জম্মু-কাশ্মীরের মেয়েরা তাঁদের রাজ্যের বাইরে বিয়ে করতেই পারতেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিয়ের পরে তাঁরা বাপেরবাড়ির সব সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে গেলে এই বঞ্চিত হওয়ার পর্বও বাতিল হবে। নিজের রাজ্যের বাইরে বিয়ে হলেও সে ক্ষেত্রে কাশ্মীরি কন্যারা পিতৃসূত্রে সম্পত্তির উত্তরাধিকারি থাকবেন।
তাতেই রাজত্ব ও রাজকন্যার হাতছানি দেখছেন অনেকে! সোশ্যাল মিডিয়ার মিমে সেই মানসিকতাই ধরা পড়ছে। কাশ্মীরি সুন্দরী বিয়ে করে ডাল লেকের পাশে বাড়িতে নাকি বাকি জীবন ‘দে লিভড হ্যাপিলি এভার আফ্টার’ সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে এ রকমই নির্লজ্জ মিমে। যেন সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ছিল কাশ্মীরি মেয়েদের ‘রক্ষাকবচ’। সেটা ভেঙে পড়লে এ বার হা-রে-রে-রে করে হানা দিলেই হল!
Advertisement
সমাজবিজ্ঞানীদের প্রশ্ন, মানুষ কি ভাবছে প্রকারান্তরে এতে তাদের একটা অধিকার জন্মে গেল? কাশ্মীরের সব কিছু, তার মধ্যে মেয়েরাও কি সহজলভ্য বলে মনে হচ্ছে তাদের? অথচ ঘোষণার পরে দাবি করা হয়, এই পরিবর্তনে কাশ্মীরি মেয়েদের অবস্থান আগের থেকে ভাল হবে।
কিন্তু গুগ্লের বর্তমান ছবিকে কার্যত ‘অবমাননাকর’ বললেও কম বলা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া ছয়লাপ কাশ্মীরে জমি আর মেয়েদের খোঁজ করে। সেখানে সাম্প্রতিক ট্রেন্ড দেখে মনে হচ্ছে, যেন এত দিন দূরে থাকা দ্রাক্ষাফল অবশেষে হাতের মুঠোয়।
তা হলে স্মার্টফোন হাতে নিয়ে এই ধরনের গুগ্ল সার্চ যারা করছে, তারা আদতে হরিণের চামড়া গায়ে দেওয়া নেকড়ে? বললেই যারা ঘরে ঢুকে পড়বে ? চন্দননগর থেকে কোনও উস্কানিরও দরকার হবে না? আনন্দবাজার।
এসআইএস/এমকেএইচ
Advertisement