আদালতের সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমকে আরও সতর্ক থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট। প্রটোকল নিয়ে কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন নিয়ে করা রিটের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন আদালত। এ সময় আদালত বলেন, সাংবাদিকদের প্রতি আমাদের অনেক শ্রদ্ধা। সাংবাদিকরা উচ্চমর্যাদার অধিকারী। রাষ্ট্র ও সমাজের মুখপাত্র হিসেবে সাংবাদিকদের কাছে আরও দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করি।
Advertisement
একই সঙ্গে সাংবিধানিক পদে থাকায় রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম অনুসারে নবম ক্রমিকে থাকা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের প্রটোকল দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের এ দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। আদালত আদেশে বলেছেন, প্রটোকল নিয়ে সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমকে আরও সতর্ক হতে হবে।
একটি রিটের নিষ্পত্তি করে বুধবার (৭ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একরামুল হক টুটুল।
আইনজীবী একরামুল হক টুটুল বলেন, ‘একজন বিচারপতির প্রটোকল নিয়ে কিছু অনলাইন প্রতিবেদন করেছিল। প্রতিবেদনগুলো চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হলে আদালত এই আদেশ দেন। পাশাপাশি আদালত বলেছেন, প্রটোকল নিয়ে সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমকে আরও সতর্ক হতে হবে।’
Advertisement
গত বুধবার (৩১ জুলাই) মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির এক নম্বর ফেরিঘাটে যুগ্ম সচিবের জন্য তিন ঘণ্টা ফেরি দাঁড়িয়ে থাকলে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটে হাইকোর্ট বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ ভিআইপি নয়, বাকিরা সবাই রাষ্ট্রের কর্মচারী।’
এরপর হাইকোর্টের একজন বিচারপতি প্রটোকল চাইলে গত ২ আগস্ট একটি অনলাইনে ‘রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ ভিআইপি নয়, আদেশের পর ভিআইপি প্রটোকল চাইলেন বিচারপতি’, বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ‘ডিসির কাছে ভিআইপি প্রটোকল চাইলেন বিচারপতি’, অপর এক অনলাইনে ‘হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরও ভিআইপি প্রটোকল চাইলেন বিচারপতি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া বরিশালের স্থানীয় দুটি অনলাইন পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এসব পত্রিকার প্রতিবেদন সংযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের প্রটোকল নিয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা রিটে চ্যালেঞ্জ করে আজ বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী মো. শাহিনুর রহমান রিট আবেদনটি করেন। রিটে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রেস কাউন্সিলের সচিবকে বিবাদী করা হয়।
রিটের যুক্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সাংবিধানিক পদধারী। রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে বিচারপতিরা ৯ নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন। হাইকোর্ট সাংবিধানিক পদের প্রটোকলের ওপর কোনো রকম নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। প্রটোকল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ভিত্তিহীন। সাংবিধানিক পদধারী যারা, তারা তাদের চাকরি অনুসারে প্রটোকল পান, তাদের প্রটোকল না দিতে সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেননি। কোনো রকম ভিত্তি ছাড়া এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা মর্যাদাহানিকর।
চাকরির সুবাদে সুপ্রিম কোর্টেও বিচারপতিরা আচরণ বিধি অনুসরণ করেন। যদি তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা না দেয়া হয় তাহলে শপথ অনুযায়ী তাদের কর্তব্য পালন বিঘ্নিত হবে। এ ধরনের মর্যাদাহানিকর প্রতিবেদনের কারণে সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।
Advertisement
রিট আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির প্রটোকল নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি থেকে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকে বিরত রাখতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল জারির আরজি করা হয়।
এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ