আজ থেকে ৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীর অধিকাংশ ভূ-ভাগ ছিল পানিতে নিমজ্জিত। প্রাগৈতিহাসিক জলমগ্ন বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে হিমবাহ যুগে পদার্পণ করে; তখন ভূ-ভাগে আটকা পড়ে নুমুলাইট। নুমুলাইট পৃথিবীর প্রাচীন জীবের একটি। ক্রিটেসিয়াস সময়ে এরা ঘুরে বেড়াত পৃথিবীর মহা-জলাধারে। ছোট গোলাকার গড়নের হওয়ায় প্রাগৈতিহাসিক কালের এ জীবের নামকরণ করা হয়েছিল নুমুলাইট। লক্ষ বছরের ব্যবধানে উপযুক্ত পরিবেশের প্রভাবে জৈব অবস্থা থেকে নুমুলাইট পরিণত হয় অজৈব জীবাশ্মতে।
Advertisement
আফ্রিকা ও সংলগ্ন অঞ্চলে চুনাপাথরের স্তরে মহাকালের সাক্ষী হয়ে এখনো রয়ে গেছে নুমুলাইট জীবাশ্ম। নুমুলাইটের জীবাশ্ম বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চল থেকে খুঁজে পেয়েছেন সুন্দরবনের প্রত্নতত্ত্বের গবেষক ও ওয়াইল্ডটিমের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে কর্মরত ঋজু আজম। নুমুলাইটের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া এবং আবিষ্কারের পেছনের গল্প জানিয়েছেন এ গবেষক। তিনি বলেন, ‘ভূগোল থেকে জানতে পেরেছি, প্রাচীনকালে আমাদের এ অঞ্চল প্যানজিয়া আঁকারে আফ্রিকা মহাদেশের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কালের ব্যবধানে ভূখণ্ড বিচ্ছেদ হলে আমরা যুক্ত হয়েছি বর্তমান এশিয়ায়। কিন্তু সঙ্গে রয়ে যায় প্যানজিয়ার নুমুলাইট।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের ঘটনা, সহকর্মীদের সঙ্গে গিয়েছিলাম প্রাচীন গৌড় রাজ্যের পথে-প্রান্তরে। পথ চলতে গিয়ে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম একটি সাদা পাথরের মতো বস্তু। ছোটবেলা থেকে রহস্য ও রোমাঞ্চপ্রিয় ছিলাম, ফলে বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের খোঁজ-খবর রাখতাম। সে সুবাদে বস্তুটি হাতে নিয়েই চমকে উঠি। সাদা পাথরটিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো চাকতি দেখে মনে হলো অজানা কোন জীবাশ্ম।’
এ গবেষক বলেন, ‘এরপর রাজশাহী থেকে ফিরেই শুরু হলো এর পরিচয় সন্ধান। দেশ-বিদেশের বেশ কয়েকজন জীবাশ্মবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। জীবাশ্মবিদের কাছ থেকে জানতে পারলাম, খুঁজে পাওয়া সেই সাদা বস্তুটিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো চাকতিগুলো নুমুলাইট। যা এক প্রাগৈতিহাসিক জীবের জীবাশ্ম। তবে শুধু নাম-পরিচয় জেনেই মন ভরেনি আমার। প্রচণ্ড কৌতূহল বোধ করলাম, জীবাশ্মটি বাংলাদেশে এলো কিভাবে?’
Advertisement
ঋজু আজম বলেন, ‘আবারও শুরু করলাম তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধান। জানলাম, ইয়োসিন যুগপর্বে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বগুড়া, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় অবস্থিত চুনাপাথরের স্তরে পরিদৃষ্ট হয় নুমুলাইট। অনুসন্ধানে জানলাম, এমনি অসংখ্য মুদ্রা নুমুলাইট সম্বলিত পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছিল পিরামিড। তৎকালীন মিশরীয়রা হয়তো নুমুলাইট সম্বলিত ভূ-স্তরটি ব্লক আঁকারে কেটে এনেছিল ইমারত নির্মাণের জন্য। একইভাবে কয়েকশ বছর আগে আমাদের এ অঞ্চলে জাতিগোষ্ঠীরা ইমারত তৈরির কাঁচামাল হিসেবে চুনাপাথরের সঙ্গে তুলে এনেছিল নুমুলাইট।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নামক এ ভূখণ্ডে নুমুলাইট জীবাশ্মর উপস্থিতি পরিচয় করিয়ে দেয় সেই প্রাগৈতিহাসিক পর্বের সাথে আমাদের যোগসূত্র। মনে করিয়ে দেয়, আমরা শুধু পলিতেই গড়ে উঠিনি। আমরা প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিকও।’
এসইউ/জেআইএম
Advertisement