দেশজুড়ে

নজর কাড়ছে কালাবাবু, খোকাবাবু ও কালামানিক

পবিত্র ঈদ উল আজহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এই ঈদে সামর্থবান মুসলিম নারী-পুরুষরা পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন। ফলে কোরবানির ঈদকে ঘিরে বহুগুণে বেড়ে যায় পশুর চাহিদা।

Advertisement

পশুর এই বাড়তি চাহিদাপূরণ ও মুনাফা লাভের আশায় প্রতি বছরই বিশেষ যত্ন সহকারে গরু-ছাগলসহ কোরবানির উপযুক্ত পশু লালন-পালন করেন খামারিরা।

দেশের অন্যান্য জেলার মত এবারও কোরবানির পশু পালন করেছেন টাঙ্গাইলের খামারিরা। তবে বেশি দামের আশায় মোটাতাজাকরণে কোনো বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক আর দেশীয় খাদ্য দিয়ে পশু পালন করেছেন তারা।

ইতোপূর্বে দেশীয় এ পদ্ধতিতে পশু পালন করে সাফল্য পাওয়ায় এ বছর জেলার প্রতিটি খামারিই এই পদ্ধতিতে পশু পালন করেছেন। এসব খামারের প্রতিটি ষাঁড়ই বেশ হৃষ্টপুষ্ট। এর মধ্যে ক্রেতাদের বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে বাসাইল উপজেলার হাবলা উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মেহেদী হাসানের প্রায় ৪০ মণ ওজনের ষাঁড় কালাবাবু। খামারি এ ষাঁড়টির দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ টাকা। যদিও বর্তমানে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায় কিনতে আগ্রহী ক্রেতারা।

Advertisement

এছাড়া কালিহাতীর মহেলা গ্রামের মোস্তফার প্রায় ৩৫ মণ ওজনের কালা মানিকের দাম ১৫ লাখ এবং নাগরপুর উপজেলার নঙ্গীনা বাড়ির মো. আবুল কাশেম মিয়ার ২৫ মণ ওজনের কালো সাদা রঙের ষাঁড় খোকাবাবুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ। তবে আকর্ষণীয় ওই ষাঁড়গুলো বিক্রি আর দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। এরপরও রয়েছে ভারতীয় গরু প্রবেশের ঝুঁকি।

গত এপ্রিল পর্যন্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসেব অনুসারে, আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা পূরণে টাঙ্গাইলের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার খামারে ২৫ হাজার ৫৩৮টি ষাঁড়, ৬ হাজার ৫৬৫টি বলদ, ৪ হাজার ৭০৬টি গাভী, ৪৭টি মহিষ, ৭ হাজার ৫০৭টি ছাগল আর ২ হাজার ৬৭১টি ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

তবে দেশীয় জাতের ৮ফুট লম্বা ও প্রায় ৪০ মণ ওজনের সাড়ে ৬ বছর বয়সী ষাঁড় কালাবাবুকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন খামারি মেহেদী হাসান। গত কোরবানির ঈদে ক্রেতারা এ ষাঁড়টির দাম ৯ লাখ টাকা বললেও এবার বলছেন ৬ থেকে ৭ লাখ। বেশি ওজনের গরুর চাহিদা কম থাকায় গতবারের কোরবানিতে কালাবাবুর দাম ১৫ লাখ টাকা চাইলেও এবার তা কমিয়ে ১০ লাখ টাকায় নামিয়ে এনেছেন তিনি।

মেহেদী হাসান জানান, প্রায় সাড়ে ৬ বছর আগে তার খামারেই জন্ম হয় ‘কালাবাবুর’। জন্মের পর থেকেই গরুটিকে দেশীয় খাবার খাইয়ে লালন-পালন করা হয়েছে। গত বছর কোরবানির ঈদে ‘কালাবাবুকে’ ঢাকার একটি হাটে উঠিয়েছিলেন। সে সময় ক্রেতারা গরুটির দাম বলেছিলেন ৮ ও ৯ লাখ টাকা। তখন কালাবাবুর ওজন ছিল প্রায় ৩৭ মণ। আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় গত বছর ষাঁড়টি বিক্রি করেননি।

Advertisement

তিনি বলেন, এবার গরুটির ওজন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪০ মণ। তবে বেশি ওজনের গরুর চাহিদা কম থাকায় গত বছর কালাবাবুর দাম ১৫ লাখ টাকা চাইলেও এবার কমিয়ে ১০ লাখ চাইছেন।

তিনি আরও বলেন,কালাবাবুকে লালনপালন করতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন কালাবাবুকে ঢাকা নাকি স্থানীয় হাটে তুলবেন তা ঠিক করেননি। যে হাটে গরুর দাম বেশি পাওয়া যাবে সেখানেই তিনি গরুটিকে তুলবেন।

এদিকে সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার দিয়ে কালাবাবুকে লালন পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রৌশনী আকতার। তিনি বলেন,ষাঁড়টির সুস্থতা রক্ষায় নিয়মিত দেখাশোনা করা হচ্ছে।

লম্বায় ৯ ফুট ১০ ইঞ্চি, উচ্চতায় ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি কুচকুচে কালো রঙ আর প্রায় ৩৫ মণ ওজনের শাহীয়াল জাতের ষাঁড় কালামানিকের মালিক কালিহাতী উপজেলার মহেলা গ্রামের রঙ মিস্ত্রি মোস্তফা।

তিনি বলেন, ৩ বছর আগে পাশের গ্রামের ওয়াশিমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কিনে আনেন কালামানিককে। বুট, মাস কলাই, মসুরের ডাল, ছোলা, কুড়া, খৈল, মোটা ভূসি, আলু, ভুট্টা, কাঁচা ঘাস নিয়মিত খাইয়েছেন। প্রতিদিন ৫-৬ বার খাবার দিতে হয়। গত চার মাস যাবত প্রতিদিন ৬শ টাকার খাবার লাগছে। দিনে ২-৩ বার গোসল করাতে হয়। গরুটির জন্য গোয়াল ঘরে ফ্যানিআর পানির মটর লাগানো হয়েছে। ঘরে বাইরে আনা-নেয়ার জন্য কয়েক জন মানুষ লাগে।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে এসে অনেকেই কালামানিককে দেখছে এবং দাম করছে। বাড়িতে বিক্রি না হলে ঈদের ২-৩ দিন আগে নারায়ণগঞ্জের হাটে নেবেন। তার আশা গরুটি ১১ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।

২৫ মণ ওজনের ষাঁড় খোকাবাবুর মালিক নাগরপুরের নঙ্গীনা বাড়ির মো. আবুল কাশেম মিয়া।

তিনি জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী খোকাবাবুকে খাওয়ানো হয়েছে সবুজ ঘাঁস, গাছের পাতা, খর, ভূষি, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, নালি, চাউলের কুঁড়া, লবন আর পরিমান মত পানি। খোকা বাবুকে মোটা তাজা করার ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ বা ইনজেকশন দেয়া হয়নি। খোকাবাবুর জন্য ১৫ লাখ টাকা দাম চাইছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এস.এম আওয়াল হক জানান, আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গত এপ্রিলে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যের চেয়ে পরবর্তী তিন মাসে আরও ২০ ভাগ পশু বেড়েছে। জেলার চাহিদার চেয়ে বর্তমানে ২০ হাজার পশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে। যো অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে।

তিনি বলেন, বন্যায় প্রাকৃতিক খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার পশু পালনে প্রতিটি খামারিরই খরচ কিছুটা বেড়েছে। এরপরও দেশে ভারতীয় পশু প্রবেশ না করলে খামারিরা ভালো দাম পাবেন।

আরিফ উর রহমান টগর/এমএমজেড/জেআইএম