উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ পশুর হাট ঈশ্বরদীর অরনকোলায় ‘নিরাপদ’ গরু কিনতে আসছেন অনেকেই। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার হাট বসে। তবে ঈদ উপলক্ষে বসে বিশেষ হাট। এখান থেকে প্রত্যেক কোরবানির ঈদে ট্রাক ভর্তি গরু যায় ঢাকায়।
Advertisement
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের মেডিকেল টিমের সদস্যরা মঙ্গলবার হাটেই পশু পরীক্ষা করে ক্রেতাদের জানিয়েছেন সব গরু নিরাপদ। ফলে দাম যা-ই হোক, সুস্থ ও নিরাপদ গরু কেনার আনন্দ নিয়ে অনেকে বাড়ি ফিরেছেন।
উপজেলার কোরবানির হাটগুলোতে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের মেডিকেল টিমের উপস্থিতির কারণে আবুল হোসেন সরদারের মতো অনেক ক্রেতাই আস্থা নিয়ে গরু কিনছেন।
জানা গেছে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসকরা প্রতিটি হাটেই উপস্থিত থাকছেন। তারা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখছেন। গরুগুলোকে ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে কি না বা সেগুলো অসুস্থ কি না- তা পরীক্ষা করছেন।
Advertisement
এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঝে মধ্যেই ক্রেতারা মেডিকেল টিমের সদস্যদের ডেকে নিয়ে পছন্দের গরুটি পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন।
গরু কেনার পর আবুল হোসেন সরদার নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু নিয়ে ভয়ে ছিলাম। তাই হাটে গিয়ে গরুর দাম চূড়ান্ত করে মেডিকেল টিমের সদস্যদের ডেকে এনে দেখিয়েছি। তারা নানাভাবে পরীক্ষা করে গরুটিকে সুস্থ ও নিরাপদ বলেছেন।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈশ্বরদীতে পশুর হাট রয়েছে দুটি। সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে হাটগুলো বসছে। তাদের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের মেডিকেল টিম এসব হাটে গিয়ে নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকছেন।
ওই টিমের সদস্যরা জানান, কোনো যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়া শুধু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে হাটের গরু পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছর থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের সহায়তায় গরুর স্টেরয়েড-বিষয়ক পরীক্ষা করা হবে।
Advertisement
টিমের ভেটরনারি সার্জন ডা. তানজিলা ফেরদৌসী বলেন, ‘স্টেরয়েড খাওয়ালে গরুর কোষগুলো অতিরিক্ত পানি ধরে রাখায় সেগুলো মোটা ও মাংসল মনে হয়। এ জন্য এসব গরুর শরীরে চাপ দিলে দেবে যায়। গরুর পেছনের অংশে মাংসের পরিমাণ বেশি মনে হয় ও কিছুটা ঝুলে থাকে। ভালোমতো লক্ষ্য করলে স্বাভাবিক ও স্টেরয়েড খাওয়ানো গরুকে আরও কয়েকটি লক্ষণের মাধ্যমে পৃথক করা যায়।’
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিকেল টিমের সদস্য হয়ে আমিও হাটে গিয়ে পরীক্ষা করেছি। এখন পর্যন্ত স্টেরয়েড খাওয়ানো গরুর অস্তিত্ব পাইনি। এবার আমরা কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। যেসব ওষুধের দোকানে স্টেরয়েড-জাতীয় উপাদান বিক্রির অভিযোগ ছিল, সেগুলো কড়া নজরদারিতে রেখেছিলাম। ফলে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এবার কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।’
অরণকোলা পশু হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান রুনু মন্ডল বলেন, এবার কৃষক ও খামারিরা খাবারের সঙ্গে ক্ষতিকর স্টেরয়েড দিয়ে গরু মোটাতাজা করেননি বললেই চলে। এর পরও মেডিকেল টিমের সদস্যরা হাটে উপস্থিত থাকায় ক্রেতারা শতভাগ আস্থা নিয়ে গরু কিনছেন।
আলাউদ্দিন আহমেদ/এমএমজেড/জেআইএম