জাতীয়

রাজধানীতে আজও টিকে আছে পঞ্চায়েত প্রথা

বাংলার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন পঞ্চায়েত প্রথা। পঞ্চায়েত বলতে সাধারণত পাঁচ বা তারও বেশি ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি পরিষদকে বোঝায়। গ্রাম প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এটা বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে ছিল পুরোপুরি মুক্ত। এভাবে প্রতিটি গ্রামেই পঞ্চায়েত প্রথা বিরাজ করতো।

Advertisement

সব শ্রেণী-বর্ণের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতো পঞ্চায়েতগুলো। গ্রামবাসীদের মধ্যে ভূমি বণ্টন, রাজস্ব আদায় করে সরকারের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করা থেকে শুরু করে, সমাজের ছোটখাটো বিবাদ নিষ্পত্তির মতো কাজগুলো করা হতো পঞ্চায়েতের মাধ্যমে। ইতিহাস থেকে এই প্রথা প্রায় মুছে গেছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় আজও টিকে আছে দিব্যি।

রাজধানীর লালবাগ, বংশাল, গেন্ডারিয়া এবং যাত্রাবাড়িতে কয়েকটি পঞ্চায়েত প্রথা রয়েছে। এসব পঞ্চায়েতের বয়স প্রায় ৪-৫ যুগের বেশি। এমনই একটি পঞ্চায়েত রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির আদর্শ পঞ্চায়েত। যাত্রাবাড়িতে মোট ৫টি পঞ্চায়েত রয়েছে, আদর্শ পঞ্চায়েত যাদের মধ্যে একটি।

সম্প্রতি এ পঞ্চায়েতের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। হাজী নজরুল ইসলামকে প্রধান সরদার করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সরদার হলেন- মুজাফ্ফর হোসেন, মুসলেহউদ্দীন আহম্মেদ, ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ, মো. আমির হোসেন, হাজী আনোয়ার হোসেন, আতাউর রহমান ভাসানী, সোহরাব হোসেন, হাজী নাজির উদ্দীন আহম্মেদ, হাফেজ মাওলানা মো. তাজউদ্দীন, হাজী মো. নুরুল হক, মনির হোসেন, মো. আব্বাছ আলী, আবদুল হক, আনোয়ার হোসেন স্বাধীন, হাজী মো. মাকসুদ, অ্যাডভোকেট আফানুর আল মামুন, হাজী আবদুল বাসেদ, হাজী আবদুল গণি, হাজী সাইজুদ্দীন আহাম্মেদ, হাজী এজাজুর রহমান।

Advertisement

যাত্রা শুরুর পর থেকে বিভিন্ন দাতব্য ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে আদর্শ পঞ্চায়েত। গত কয়েক যুগ ধরে সবচেয়ে আলোচিত যে উদ্যোগটি তারা গ্রহণ করে আসছে তা হলো, পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কোরবানির মাংস বণ্টন।

ছবি সংগৃহীত

আদর্শ পঞ্চায়েতের সদস্য (ঘর) সংখ্যা প্রায় ২২০টি। প্রতি কোরবানির ঈদে এর মধ্যে গড়ে ৭০-৮০টি পরিবার কোরবানি দিয়ে থাকে। আর বাকি ১৫০ পরিবার কোরবানি দিতে পারে না। তবে ঈদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে, সে কারণে তাদেরকেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমবণ্টন করে কোরবানির মাংস দেয়া হয়ে থাকে।

জানা গেছে, গত কোরবানি ঈদে এ পঞ্চায়েত প্রায় ৬০টি পরিবার পশু কোরবানি দিয়েছে। জবাই করা পশুর অর্ধেক পঞ্চায়েতের মাঠে দিয়ে যান তারা। বাকি অর্ধেক নিজেরা রেখে দেন। এছাড়া জবাইকৃত পশুর চামড়াও পঞ্চায়েতে জমা দেয়া হয়। এভাবে ৬০টি পরিবারের অর্ধেক করে মাংস জমা হওয়ার পর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা কেটে ভাগ করেন তারা। তার মানে, ৬০টি পরিবার মাংস দেয় আর ভাগ হয় পঞ্চায়েতের ২২০টি পরিবারের মধ্যে। আরেকটি বড় ভাগ দেয়া হয় গরিব ও দুস্থদের মাঝে।

Advertisement

এদিকে পঞ্চায়েতে জবাইকৃত পশুর চামড়াগুলো বিভিন্ন মাদ্রাসায় দিয়ে দেয়া হয়। আর চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৫০ ভাগ প্রত্যাবর্তন করে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়।

পঞ্চায়েতের সদস্য হতে হলে তিনটি পদ্ধতিতে প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করেন তারা। যিনি একই এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন, বৈবাহিক সূত্রে অথবা যিনি এখানে জায়গা জমি কিনে বসত গড়েছেন। প্রাথমিক যাচাই বাছাই শেষে তাদের পঞ্চায়েত সর্দাররা সিদ্ধান্ত নেন।

কয়েকটি পঞ্চায়েতের বাইরে দেশে আর কোথাও সেভাবে এই প্রথার অস্তিত্ব নেই। ১৯১৯ সালের ‘বেঙ্গল ভিলেজ সেলফ গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট’ পাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা থেকে পঞ্চায়েত প্রথা বিলুপ্ত হতে শুরু করে।

এমএসএইচ/জেআইএম