জম্মু-কাশ্মীরের পর্যবেক্ষক এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যদ্বাণীই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে বাতিল হয়ে গেছে; সংবিধানের সংশোধনী এড়াতে আইনি এ পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত।
Advertisement
অধিকৃত কাশ্মীরকে জোরপূর্বক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করে ভারত তার দেয়া সব প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে। এমনকি জম্মু-কাশ্মীর ঘিরে জাতিসংঘের শর্তও উপেক্ষা করেছে নয়াদিল্লি।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা পরিবর্তনে রাজ্যসভায় আনা প্রস্তাব ও প্রেসিডেন্টের আদেশের মাধ্যমে রাজ্যের বিধানসভার যে কিছু বলার আছে সেই অধিকার খর্ব করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখকে পৃথক করতে পার্লামেন্টে বিল আনা হয়েছে। কিন্তু শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে যদি এ বিভাজন করা হয়; তাহলে চলতি বছরের শুরুর দিকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকেই উসকানি দিয়ে আসা বিজেপির নেতারা যে ঘুমের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছেন, সেটি বলা যায়।
আরও পড়ুন : কাশ্মীরের জন্য মরবো : অমিত শাহ
Advertisement
শুধু তাই নয়, তারা সমৃদ্ধশালী পুঁজিবাদের মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভারতের ভাবমূর্তিকেও কাজে লাগিয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মর্যাদা কমবে। ১৯৫৪ সাল থেকে ভোগ করে আসা বিশেষ এ মর্যাদা মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের জনতাত্ত্বিক কাঠামোতে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন চেষ্টা ঠেকানোর একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। এটির বিলুপ্তির অর্থ বিজেপি তার বর্তমান যুদ্ধভাবাপন্ন মেজাজে উপত্যকায় আক্রমণ চালাল।
এ পদক্ষেপের সহিংস পরিণতি হবে। যদিও অনেক কাশ্মীরি সমর্থক পিছু হটেছেন, তারপরও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কাশ্মীরিরা দেখিয়েছেন যে, দখলদার বাহিনীকে প্রতিহত করার ক্ষমতা তাদের লোপ পায়নি। আসলে এটা একধরনের এড়িয়ে চলার কৌশল, বিজেপির পরিচালিত এ কৌশলে অতীতে আগুন জ্বলেছে।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘটনায় নতুনভাবে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে পাকিস্তান; যা ইতোমধ্যে বিশ্ব জেনে গেছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সর্বশেষ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এখন পাকিস্তানিরা ইমরান খানের কাছে জানতে চাইতে পারেন যে, আসলে ওই বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন : কাশ্মীরের সব মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিজেপি সরকার
Advertisement
প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সমর্থন অব্যাহত রাখার পরামর্শ ইমরান খানকে দিয়েছেন ট্রাম্প। কাশ্মীরেও একই ধরনের সমর্থন রাখতে বলেছেন তিনি।
তবে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ইস্যুতে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক উদাসীনতায় এটা করে দেখানোর চেয়ে বলা সহজ। কয়েক দিন আগে বিতর্কিত কাশ্মীরে যখন হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়; তখনও বিশ্বকে নীরব থাকতে দেখা গেছে। কাশ্মীরিরা আজ ভীতিকর পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছেন; তার মাঝেই এই সেনা মোতায়েন করা হয়। কিন্তু এই বিষয়ে টুঁ-শব্দও করেননি বিশ্ব মোড়লরা।
রাজনীতির এমন ব্র্যান্ডে অন্তর্নিহিত বিদ্বেষকে বিশ্বের বৃহত্তম সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যায় এবং সঠিক হিসাবে গ্রহণ করা হলো।
>>>পাকিস্তানি দৈনিক ডনের প্রকাশিত সম্পাদকীয়। আংশিক পরিমার্জিত।
এসআইএস/এমকেএইচ