একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়াই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মোহনা টেলিভিশনের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মুশফিকুর রহমানের জন্য। নিখোঁজের তিনদিন পর মঙ্গলবার ভোরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের গৌবিনপুর এলাকার একটি মসজিদ থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
Advertisement
জানা গেছে, সাংবাদিক মুশফিকুর রহমানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চরগোয়ালী এলাকায়। কয়েক দিন আগে তিনি সেখানকার চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন এর বিরোধিতা করে আসছিলেন। যার মধ্যে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার প্রভাবশালী মো. মনিরুজ্জামানও রয়েছেন। গত ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তার হোসেনের ছেলে সভাপতি ছিলেন। মো. মনিরুজ্জামান তার আগের কমিটিতে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু যখন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছেলে গত নির্বাচনে সরে যান তখন মনিরুজ্জামানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান সভাপতি হন।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার ঢাকায় কারো সঙ্গে শত্রুতা নেই। আমি সাংবাদিক। আমি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ও আওয়ামী লীগের সংবাদ কভারেজ করি। আমি কারো সঙ্গে কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করিনি। আমাকে তারা অনেক নির্যাতন করেছে। আমার পিঠে, কোমরে, মাথায় লাথি মেরেছে। তাছাড়া তারা আমাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছে আর বলেছে, ‘তোর এত সাহস কোথা থেকে এল। তুই নিজেকে কী মনে করিস? তোকে আর পৃথিবীর মুখ দেখতে হবে না। তোকে আমরা মেরে ফেলব।’
তিনি আরও বলেন, আমাকে তারা বলেছে, তোর শেষ ইচ্ছা কী? তখন আমি বললাম, আমি আমার মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু তারা বললো, এটা সম্ভব নয়।
Advertisement
সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার ঢাকায় কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু কয়েক দিন আগে চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হই এবং আমি সভাপতি হওয়ার আগে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করি। সম্প্রতি আমার কাছে একটি ফোন আসে। ওই ফোন কলে আমাকে ও আমার পরিবারকে গুম করার হুমকি দেয়া হয়। এরপর আবারও এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। তাকে আমি পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি পরিচয় দেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখন অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভয় হয়। সুনামগঞ্জের পুলিশ ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা অনেক ভালো। আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার বড় ভাই ও মোহনা টেলিভিশনের সহকর্মীরা আমাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে সুনামগঞ্জ আসছেন।’
এদিকে মোহনা টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক মুশফিকুর রহমানকে দেখতে হাসপাতালে আসেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ খান ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত।
মোসাইদ রাহাত/এমবিআর/জেআইএম
Advertisement