আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়ায় যাত্রী, যানবাহন ও পশুবাহী ট্রাক পারাপার নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন।
Advertisement
এবারের ঈদুল আজহায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের চাপ সামলাতে এবং পশুবাহী ট্রাক পারাপারে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ২০টি ফেরি ও ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করবে। এছাড়া ঘাট এলাকার যানজট ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশসহ প্রায় আড়াই শতাধিক পুলিশ দ্বায়িত্ব পালন করবে। সেই সঙ্গে থাকবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ঈদ বা উৎসবের সময় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় বেড়ে যায় দালাল, ছিনতাইকারী, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের দৌরাত্ম। এ জন্য এবার ঈদের ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বাড়ার আগেই পুরো ঘাট এলাকা সিসি টিভির আওতায় আনবে পুলিশ। ফলে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে এবং নিরাপদে যাত্রী, গরু ব্যবসায়ী ও মালিকরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়া রাতে ঘাট এলাকা লাইটিংয়ের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
এসব বিষয় নিয়ে জেলা পুলিশের কর্মকর্তা, দৌলতদিয়া বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, বাস মালিক গ্রুপসহ সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহনের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রীবৃন্দের সঙ্গে সভা করেছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
Advertisement
জানা গেছে, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় প্রতিদিন ৬টি ফেরি ও ১টি লঞ্চ ঘাটের মাধ্যমে প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার যানবাহন ও লক্ষাধিক যাত্রী পারাপার হয়। ঈদের আগে ও পরে যাত্রী এবং যানবাহনে চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ফলে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ঘাট কর্তৃপক্ষকে। তবে এখন নদীতে তীব্র স্রোত না থাকা, পর্যাপ্ত সংখ্যক লঞ্চ ও ফেরি চলাচলসহ সব ঘাট সচল থাকায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি হবে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও পশুবাহী ট্রাক পারাপার স্বাভাবিক রাখতে এ রুটে ঈদের ৩/৪ দিন আগে থেকেই ২০টি ফেরি ও ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করবে। পাশাপাশি এ রুট দিয়ে ঈদের আগে ও পরে টানা ছয়দিন পশুবাহী ট্রাক, কাঁচামাল ও জরুরি পচনশীল পণ্য ছাড়া সব ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। এ সময় পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হবে।
বর্তমানে এ রুটে ছোট বড় ১৮টি ফেরি চলাচল করছে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ার আগেই বহরে আরও ২টি ফেরি যুক্ত হবে।
যাত্রীরা বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে যানজট বা যাত্রী ভোগান্তি নতুন না। সেই সঙ্গে মাঝে মধ্যে দালাল ও ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়তে হয়। তবে এবার এখন পর্যন্ত ছিনতাইকারী বা দালাল চক্রের দৌরাত্ম দেখছেন না। ঘাট এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভাল। তবে ফেরির সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
Advertisement
পরিবহনের চালকরা বলেন, দৌলতদিয়ার বর্তমান অবস্থা থাকলে ঈদে যাত্রী পারাপারে তাদের কোনো ভোগান্তি হবে না। এখন নদীতে স্রোতও কমে গেছে। কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবে ফেরি চালালে ভোগান্তি ছাড়াই অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে এবং সিডিউল বিপর্যয়েও পড়তে হবে না।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের সুপার ভাইজার মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ঈদে যাত্রী পারাপারে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট রুটে ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করবে। বর্তমানে এ রুটে কোনো ফিটনেস বিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ নেই। চাপ থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবেন না।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. মাহবুব আলী সরদার বলেন, বর্তমানে এ রুটে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে এবং ঈদের আগে আরও ২ টি ফেরি বহরে যুক্ত হবে। এই ২০টি ফেরি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলে ঈদে জনগণের কোনো ভোগান্তি হবে না। বর্তমানে নদীতে স্রোত কম, তাই ফেরিগুলোর সময় কম লাগবে এবং যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে থাকতে হবে না। প্রতি বছরের মত এবারও গরুর ট্রাককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঈদে দৌলতদিয়া ঘাটের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও যানজট স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশসহ প্রায় আড়াইশ জন পুলিশ দ্বায়িত্ব পালন করবে। এ ঘাট দিয়ে সুষ্ঠুভাবে যাত্রীরা নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। ছিনতাইকারী ও দালাল চক্র নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সচেতন রয়েছে। ঈদের আগেই ঘাট পুরো ঘাট এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন এবং পশুবাহী ট্রাক যেন স্বাভাবিক ভাবে পার হতে পারে, সে বিষয়ে প্রশাসন ও ঘাট সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সভা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতি বছরের মত এ বছরও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য দৌলতদিয়ায় একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ফেরিগুলোকে সঠিকভাবে চলাচলের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফিরতে কোনো ভোগান্তি হবে না। এছাড়া এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে কেউ বাড়তি ভাড়া আদায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রুবেলুর রহমান/এমএমজেড/পিআর