দেশজুড়ে

ছেলের কাটা ২ হাত ব্যাগে নিয়ে ঘুরছেন বাবা

রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুরে শাহিন খান (২৮) নামে এক যুবকের দুই হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

এদিকে, কেটে ফেলা ছেলের দুই হাত ব্যাগে নিয়ে বিচারের দাবিতে পথে পথে ঘুরছেন অসহায় বাবা মো. হাসেম খান। তবে এখন পর্যন্ত শাহিন খানের কাটা দুই হাত জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি।

সোমবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় ও সদর থানায় একটি ব্যাগে শাহিনের কাটা দুই হাত ব্যাগে নিয়ে বিচারের দাবিতে শাহিনের বাবা ও বড় ভাইকে ঘুরতে দেখা যায়।

এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত ইসমাইল ও শাহিনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাও রয়েছে বলে জানা যায়। পূর্ববিরোধের জের ধরে শাহিনের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি শাহিনের বাবার।

Advertisement

আরও পড়ুন > চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে যুবকের দুই হাত বিচ্ছিন্ন, গ্রেফতার ১

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত ইসমাইলের আরেক সহযোগী শাহিন রাঢ়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।

এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে শাহিন খানের বাবা মো. হাসেম খান বাদী হয়ে সদর থানায় এ মামলা করেন। এরই মধ্যে মামলার ৩নং আসামি শাহিন রাঢ়ীকে (২৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার শাহিন রাঢ়ী কল্যাণপুর এলাকার জাফর রাঢ়ীর ছেলে। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে তিনটি রক্তমাখা ধারালো চাপাতি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন > যুবকের দুই হাত কেটে ফেলল দুর্বৃত্তরা

Advertisement

মামলার আসামিরা হলো- কল্যাণপুর এলাকার রহমান গাজীর ছেলে ইসমাইল গাজী (৩২), মৃত মান্নান পাটোয়ারীর ছেলে ইদ্রিস পাটোয়ারী (২৮), জাফর রাঢ়ীর ছেলে শাহিন রাঢ়ী (২৮), আমিন হক রাঢ়ীর ছেলে লালু (৩০) ও সুরুজ লাঠিয়ালের ছেলে শাহ আলম (২৮) এবং অজ্ঞাত ৩-৪ জন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহিন খানকে বাড়ি থেকে ডেকে কল্যাণপুর কবরস্থান সংলগ্ন বালুর মাঠের পশ্চিম পাশে নিয়ে যায় মামলার আসামিরা। এ সময় ধারালো চাপাতি দিয়ে শাহিনকে খুনের চেষ্টা করে তারা। শাহিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করে মামলার ১নং আসামি ইসমাইল।

এতে শাহিন মাটিতে পড়ে যায়। তখন শাহিনের হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে মাঠের পূর্ব পাশে নিয়ে জবাইয়ের চেষ্টা করা হয়। এ সময় শাহিন দুই হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলে দুই হাত কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তারা। শাহিনের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় আসামিরা।

এরপর গুরুতর অবস্থায় শাহিনকে প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল, পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহিন।

আরও পড়ুন > ফেরিতে স্কুলছাত্রের মৃত্যু, ছেলের শোকে হাসপাতালে মা

স্থানীয়রা জানান, শাহিন খান এবং ইসমাইল, ইদ্রিস, শাহিন, লালু ও শাহ আলম একসঙ্গে চলাফেরা করতো। এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ মাদক সেবন, ব্যবসা এবং নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা। এর আগেও শাহিন খান ও ইসমাইলের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। এসব কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।

রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, যুবকের হাত বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামি শাহিন রাঢ়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে তিনটি রক্তমাখা চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। এ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।

এএম/জেআইএম