ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলকে যত বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, ঠিক ততটাই চড়া স্বরে শুরু হয়ে গেল বিরোধিতা। এখন থেকে শুরু হলো ভারতের ভাঙন; রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সোমবার রাজ্যসভায় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, এর মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানকে হত্যা করা হলো।
Advertisement
জম্মু-কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহ গৃহবন্দি থাকায় আসতে পারেননি গণমাধ্যমের সামনে। কিন্তু টুইটারে তারা তীব্র আক্রমণে বিঁধলেন মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের কথা অমিত শাহ রাজ্যসভায় ঘোষণা করা মাত্রই তুমুল হট্টগোল শুরু করেন বিরোধী দলের সাংসদরা। কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, ডিএমকে-র তিরুচি শিবা, এমডিএমকে-র ভাইকোদের নেতৃত্বে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধী সাংসদরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। জম্মু-কাশ্মীরের দল পিডিপির দুই সাংসদ সংবিধানের প্রতিলিপি সংসদের মধ্যেই ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন : দুই ভাগ হলো কাশ্মীর, কী আছে সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে
Advertisement
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেই রুলিং দিয়েছিলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ও উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু। কিন্তু তাতেও হট্টগোল আটকানো যায়নি। পিডিপি সাংসদদের আচরণে প্রবল অসন্তুষ্ট হন ভেঙ্কাইয়া, মার্শাল ডেকে তাদের বের করে দেয়ার নির্দেশ দেন। হট্টগোলের মধ্যেই অমিত শাহ কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র এবং বিল পড়তে শুরু করেন।
চেয়ারম্যানের বিশেষাধিকার প্রয়োগের সুবাদে অমিত শাহ তার কাজ সেরে ফেলেন ঠিকই। কিন্তু তাতে রাজ্যসভার উত্তাপ কমানো যায়নি। কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ শুরু করে বিভিন্ন বিরোধী দল। সংসদের ভেতরে শুধু নয়, বাইরেও শুরু হয় ক্ষোভ।
নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং তার নীতিকে সবচেয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন পি চিদম্বরম। গুলাম নবি আজাদ, ডেরেক ও’ব্রায়েনদের পাশে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন দেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক ইতিহাসে আজ কালো দিন। সরকার যা করেছে, তা অভূতপূর্ব।’
আরও পড়ুন : পাকিস্তানে যোগ না দেয়াটা ভুল ছিল : মেহবুবা মুফতি
Advertisement
চিদম্বরম পুরো দেশকে সতর্ক করে দেয়ার ঢঙে বলেন, ‘এটা যদি জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে করা যায়, তা হলে দেশের অন্য রাজ্যগুলোর প্রত্যেকটার সঙ্গেই করা যেতে পারে।’ প্রবীণ কংগ্রেস নেতার ব্যাখ্যা, ‘প্রথমে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেয়া হবে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হবে, বিধানসভা ভেঙে দেয়া হবে, বিধানসভার ক্ষমতা সংসদের হাতে যাবে, সরকার সংসদে একটা প্রস্তাব আনবে, সেটাতে সংসদ অনুমোদন দেবে এবং রাজ্য আর থাকবে না।’
চিদম্বরম আশঙ্কা প্রকাশের ভঙ্গিতে বলেন, প্রত্যেকটা রাজ্যকে এভাবে ভেঙে দেয়া যাবে, দুটি অথবা তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা যাবে। এরপরই আসে চিদম্বরমের সবচেয়ে কঠোর মন্তব্যটি। তিনি বলেন, ‘এই সরকার যদি এই পথেই এগোতে থাকে, তা হলে এখন থেকেই ভারতের ভাঙন শুরু হয়ে গেল।’
জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভায় বর্তমানে কংগ্রেসের দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, সংবিধানকে হত্যা করা হল। ভারতের মানচিত্র থেকে একটা রাজ্য আজ মুছে গেল; এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
আরও পড়ুন : দ্বিখণ্ডিত কাশ্মীর : ভারতকে ঠেকানোর হুমকি পাকিস্তানের
জম্মু-কাশ্মীরের এক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যসভায় তীব্র আক্রমণে বিঁধছেন সরকারকে, তখন বাকি দুই মুখ্যমন্ত্রী উপত্যকায় গৃহবন্দি। রাজ্যকে যে দু’ভাগে ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং দু’টি ভাগকেই যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে, সে খবর বাড়িতে বসেই পেতে হয়েছে মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহকে। দু’জনই সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেছেন সরকারকে।
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি টুইটারে দেয়া এক টুইটে বলেন, ‘আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের কালো দিন। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্ব প্রত্যাখ্যানের এবং ভারতের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত উল্টো ফল দিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে ভারত সরকার নিয়েছে, তা বেআইনি ও অসাংবিধানিক এবং এই সিদ্ধান্ত ভারতকে জম্মু-কাশ্মীরে একটি দখলদার শক্তিতে পরিণত করবে।
ওমর আবদুল্লাহ টুইটারে বলেন, ১৯৪৭ সালে যখন জম্মু-কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে জুড়েছিল, তখন রাজ্যের মানুষ ভারতের ওপরে যে বিশ্বাস রেখেছেন, সে বিশ্বাস আজ সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে দেয়া হল। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী এবং বিপজ্জনক ফলাফল হবে বলেও ওমর আবদুল্লাহ এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আনন্দবাজার।
এসআইএস/এমএস