আন্তর্জাতিক

কাশ্মীরের নতুন ইতিহাস রচনার পথে মোদি সরকার

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে ভারত সরকার। জওহরলাল নেহেরুর আমলে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদার ৩৭০ ধারাটি বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যসভায় এ ঘোষণা দেন।

Advertisement

একই সঙ্গে কাশ্মীর থেকে ভেঙে আলাদা করে দেয়া হয়েছে লাদাখকে। এর ফলে মূলত নতুন করে কাশ্মীরের ইতিহাস রচনা করতে চলেছে মোদি সরকার। জানা গেছে, দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। দুটি জায়গাতেই দুজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করা হবে।

গতকাল রোববার নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিনভর দফায় দফায় বৈঠক অন্যদিকে পাকিস্তানের হুঁশিয়ারির কারণে উৎকণ্ঠার পারদ চড়ছিল কাশ্মীরে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না, কেন্দ্র ঠিক কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। অবশেষে সোমবার সকালেই এমন ঘোষণা এলো।

গত কয়েকদিন ধরেই কাশ্মীরে চরম উত্তেজনা চলছিল। আতঙ্কিত মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। শনিবার পর্যটকদের কাশ্মীর ত্যাগের নির্দেশ দেয় সরকার। এ ছাড়া মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত ১০ হাজার সেনা। গত রাতে গৃহবন্দি করা হয় কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখমন্ত্রীকেও।

Advertisement

কাশ্মীরের চলমান অস্থিরতার মধ্যেই গত রাতে ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়। এছাড়া গৃহবন্দি হয়েছেন বিধায়ক সাজ্জাদ লোন। এদিকে সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কাশ্মীরে যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরেই। গত শনিবার হিন্দু তীর্থযাত্রীদের অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়ে পর্যটকদের দ্রুত কাশ্মীর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। এছাড়া মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত সেনা। মানুষ আতঙ্কিত হলে গোটা উপত্যকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গোয়েন্দা সূত্রে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা হবে বলে জানতে পেরেছে। তবে অনেকেই বলছেন সংবিধানে কাশ্মীরে বিশেষ অধিকার সম্বলিত ৩৫-ক এবং ৩৭০ ধারা বাতিলের চেষ্টা করছে সরকার। তবে কাশ্মীরের রাজ্যপাল এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে চুপ ছিল।

রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছিলেন, সেনা মোতায়েনের পেছনে সরকারের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। সোমবার তাদের শঙ্কাই সত্য বলে প্রমাণিত হলো। রোববার সন্ধ্যায় একটি সূত্রে শোনা যায়, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য সে কথা স্বীকার করেনি সরকার।

Advertisement

তবে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বিতর্কিত এই উপত্যকাটির বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় থানা পাহারা দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ। এছাড়া বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরিয়ে আনা হয়েছে যুব ক্রিকেটারদেরও।

শনিবার উত্তেজনা চরমে উঠলে রোববার কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির বাড়িতে এক সর্বদলীয় বৈঠকে মিলিত হন। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করার চেষ্টা হলে একযোগে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন তারা। তাই তাদেরকে ওইদিন রাতেই গৃহবন্দি কিংবা আটক করা হয়।

বিএ/এমকেএইচ