দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড নিয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন খালেদার অন্যতম আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
Advertisement
তিনি বলেন, সরকার তার (খালেদা) পরিবার বা আমাদের (আইনজীবীদের) সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনো আলোচনা করেনি। তবে প্যারোল চাওয়া হবে কি না- সে বিষয়ে মাহবুব উদ্দিন খোকন কোনো মন্তব্য করেননি।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে সরকার বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু ওইসব বক্তব্য দেয়া ছাড়া তারা (সরকার) তার (খালেদা) পরিবার বা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেছে। সরকার তাকে জেলে রেখেই রাজনীতি করতে চায়।
Advertisement
খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য আসছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে খোকন বলেন, এক-এগারোর সময় আমি খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কাজ করেছি। তিনি অসুস্থ, খুবই অসুস্থ। তবুও প্য্যারোলের বিষয়ে সরকার কোনো যোগাযোগ করেনি।
জানা গেছে, দলটির বেশির ভাগ নেতা চান জামিনে মুক্ত করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে। খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা ও সুস্থতা নিয়ে চাপ আছে দলের তৃণমূল থেকেও। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, দুজনই খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছেন উন্নত চিকিৎসা নিতে রাজি হতে।
এর আগে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে নমনীয় বলে জানা যায়। তবে, সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সমঝোতা হলে খালেদা জিয়াকে প্যারোল দেয়ার পক্ষপাতী বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্যারোল প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আবেদন পেলে খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়টি চিন্তা করা হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোল পেতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত। তাই জামিনে তার মুক্তি চাই।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘প্যারোলের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। সরকার থেকেও এ ধরনের কোনো কথা বলা হয়নি। বিএনপি আবেদনও করেনি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, ‘প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আর এ ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদনেরও প্রশ্ন ওঠে না।’ তার মতে, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রচারণা।
উল্লেখ্য, দুদকের করা দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালত তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া ও সাজা বৃদ্ধির জন্য হাইকোর্টে আপিল আবেদন করে দুদক। উভয় আবেদন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন।
এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালত তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়। বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন।
এফএইচ/বিএ/এমএস