বরগুনায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যেই মারা গেছে তাওহীদ নামে ১৮ মাস বয়সী এক শিশু। এছাড়া জেলায় প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশা শনাক্ত হওয়ায় শহরজুড়ে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। তাই পৌর এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার পাশাপাশি খানা-খন্দ ও ডোবায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়েছে পৌরবাসী।
Advertisement
এদিকে মশা নিধনে পৌর এলাকায় নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ দেয়ার পরও ডেঙ্গু মশা শনাক্ত হওয়ায় ওষুধের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
শনিবার দুপুরের দিকে বাসায় থাকা অবস্থায় বরগুনা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চরকলোনি এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক মো. রিয়াজ আহমেদ মুছার শরীরে মশা কামড় দেয়। মশাটি মারার পর এটি দেখতে এডিস মশার মতো দেখালে তিনি ইন্টারনেট থেকে এডিস মশার ছবি বের করে মিলিয়ে দেখেন। ছবির সঙ্গে হুবহু মিল থাকায় তিনি মশাটিকে একটি পলিথিনে মুড়িয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যান। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আকতারুজ্জামান আজাদ মশাটিকে প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশা হিসেবে শনাক্ত করেন।
একইদিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বরগুনা পৌরসভার বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এই প্রতিবেদকের হাতে একটি মশা কামড় দেয়। তিনিও মশাটি মারার পর মশাটিকে এডিস মশা সন্দেহ হলে সেটি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যান। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আকতারুজ্জামান আজাদ এটিকেও প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশা হিসেবে শনাক্ত করেন।
Advertisement
এ বিষয়ে ডা. মো. আকতারুজ্জামান আজাদ বলেন, আমার কাছে যে মশা দুটো নিয়ে আসা হয়েছিল, সে দুটিই এডিস মশা ছিল। এ মশার কামড়েই মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। এডিস মশা কালো রঙের হয়ে থাকে এবং এ মশার পায়ে সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রথমে যেসব ডেঙ্গু রোগী আসছিলেন তারা ছিলেন ঢাকা ফেরত। কিন্তু পরবর্তীতে যেসব ডেঙ্গু রোগী আসা শুরু করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই ঢাকায় যাননি। এমনকি তাদের পরিবারের কেউ ঢাকায় যাননি। তাই বরগুনায় এডিস মশা আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বরগুনা পৌরসভার বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে প্রতিদিন না হলেও একদিন পর পর ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ দেয়া হয়। তারপরও সেখানে এডিস মশা পাওয়ায় মশা নিধনের ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে বরগুনার সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বরগুনায় ৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২২ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিদের মধ্যে ১৪ জন বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ও দুইজন আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
Advertisement
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদর উপজেলার কদমতলার হালিমা বেগম বলেন, ‘আমি বাড়িতেই থাকি। সম্প্রতি আমি কোথাও বেড়াতেও যায়নি। আমার বাড়িতেও কেউ বেড়াতে আসেনি। হঠাৎ জ্বরাক্রান্ত হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডেঙ্গু জ্বরের কথা জানান চিকিৎসকরা।’
এদিকে বরগুনায় এডিস মশা শনাক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে শহর জুড়ে বিভিন্ন আতঙ্ক শুরু হয়।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, মশা নিধনে শুধু ওষুধ দিলেই হবে না, সবাইকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আমরা সবাই যদি নিজেদের বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি তাহলে এমনিতেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এ বিষয়ে বরগুনা পৌরসভার মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিনই ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগ করছি। ওষুধের গুণগত মান যাচাই-বাছাই করে বিদেশ থেকে আমদানি করার সুযোগ নেই। বাজারে যে ওষুধ পাচ্ছি সেই ওষুধ ব্যবহার করছি।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এফএ/পিআর