ভিজিডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও সাত মাস ধরে চাল পাচ্ছেন না গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বদনীভাঙ্গা গ্রামের স্বামীহারা হাওয়া বেগম (৫৬)। প্রতিনিয়ত ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি তার। এ অবস্থায় অসহায় জীবন যাপন করছেন হাওয়া বেগম।
Advertisement
১৬ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র সন্তান ফাইজুলকে নিয়ে চলছে হাওয়া বেগমের সংসার। নিজেদের সহায় সম্পত্তি বলে কিছু নেই। ঠাঁই নিয়েছেন সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে। প্রায় ২০ বছর আগে হাওয়া বেগমের স্বামী আলাউদ্দিন সেখানেই কোনোমতে একটি টিনের ছাউনি দিয়ে পরিবারটির রাতের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন।
হাওয়া বেগম নিজে জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ। একমাত্র সন্তান ফাইজুল ভ্যানগাড়ি চালিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনোমতে সংসারের ঘানি টেনে চলছেন।
হাওয়া বেগমের মাটির ঘরটি এখন বেশ নাজুক। কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ইতোমধ্যে ঘরের চাল ফুটো হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই চাল গড়িয়ে পানি পড়ে ঘরের ভেতর।
Advertisement
স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাওয়া বেগমের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে উপজেলা প্রশাসন তাকে সরকারি সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাকে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় তার নাম লিপিবদ্ধ করেন। এরপর থেকে প্রতি মাসেই হাওয়া বেগমের নামে সরকারি সহায়তার ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বরাদ্দের সাত মাস অতিবাহিত হলেও এখনও কোনো চাল পাননি হাওয়া বেগম।
হাওয়া বেগমের ভাষ্য, গত ডিসেম্বর মাসে তাকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিস থেকে জানানো হয়, তার নাম সরকারি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে চাল পাওয়া যাবে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই চাল বিতরণের সময় কখনও ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় কখনও ইউপি সদস্যের বাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু চাল পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, আগে মেম্বারের পেছনে একটি কার্ডের জন্য অনেক ঘুরেও কার্ড পাইনি। এখন যখন কার্ড পাইছি সেই মেম্বার চাল দিচ্ছেন না।
হাওয়া বেগমকে হয়রানির বিষয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য রুসমত আলী জানান, হাওয়া বেগম পরিষদে চাল বিতরণের সময় এখন পর্যন্ত আসেননি। এছাড়া বিতরণের সময় আমি উপস্থিত থাকি না। তবে সে যদি চাল না পেয়ে থাকে তাহলে তালিকা দেখে তার পাওনা সব চাল এবার দিয়ে দেয়া হবে।
Advertisement
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজনিন আফরোজ জানান, হাওয়া বেগম স্বামীহারা এক হতদরিদ্র নারী। তার অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভিজিডির আওতায় তার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। চলতি বছর উপজেলার এক হাজার ৮২৯ জন নারীকে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এসব কার্ডধারীরা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগামী বছর পর্যন্ত ২৪ মাস (প্রতি মাসে ৩০ কেজি) করে চাল পাবেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী আমরা তালিকা দিলেও এ চাল বিতরণ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ।
এদিকে সরকারি সহায়তা বরাদ্দের কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা সংবাদ পাই হাওয়া বেগম চাল পাচ্ছেন না। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় ইউপি সদস্য নাকি তার চাল বরাদ্দের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। আমরা বারবার ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই সদস্যকে অনুরোধ করার পরও তারা এ অসহায় নারীকে চাল দিচ্ছেন না। তাই চলতি মাসে চাল বিতরণের সময় আমি নিজেই উপস্থিত থেকে তার হাতে তা তুলে দেব।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফিন জানান, তিনি সম্প্রতি এ উপজেলায় যোগদান করেছেন। এখন পর্যন্ত কেউ তাকে এ বিষয়ে কিছু অবগত করেনি। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাতে অসহায় নারী তার সব চাল পান।
শিহাব খান/এমএএস/এমএস