জাতীয়

সাদ কান্ধলভিকে নিয়ে আহমদ শফির বক্তব্যের প্রতিবাদ

তাবলিগ জামায়াতের আমির শায়খুল হাদিস মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভি ‘সাদ আলেম নন, মৌলভী নয়-এমনকি হাফেজও নয়’ হেফাজতে ইসলামের আমির হজরত মাওলানা শাহ আহমদ শফীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে তাবলীগ জামায়াত।

Advertisement

শাহ আহমদ শফীর ওই বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও মিথ্যাচার দাবি করে শনিবার এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, মাওলানা আহমদ শফীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, পরিকল্পিত, মিথ্যা এবং উস্কানিমূলক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি সোনারং মাঠে ইসলামী মহাসম্মেলনের নামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাওলানা আহমদ শফী সাহেব তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভি সম্পর্কে প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘সাদ আলেম নন, মৌলভী নয়-এমনকি হাফেজও নয়।’

Advertisement

চট্টগ্রাম লালখান বাজারের জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তার সম্পর্কে জানি। আমি নিজে দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজে গিয়ে কোরআন-হাদিসভিত্তিক তার বহু গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য শুনেছি। গত রমজানে তার ইমামতিতে খতমে কোরআন ভিত্তিক তারাবির নামাজে অংশ নিয়েছি। তারাবির নামাজের পর আরবি ভাষায় লেখা সাহাবায়ে কেরামের সীরাতগ্রন্থ ‘হায়াতুস সাহাবা’র তালিম-লেকচার শুনেছি। এভাবেই তিনি গত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে একজন বিজ্ঞ হাফেজে কোরআন হিসেবে তাবলিগ জামায়াতের এ বিশ্ব মারকাজে খতমে তারাবির ইমামতি করে আসছেন। এতে দেশ-দুনিয়ার লাখ লাখ মুসল্লি বিভিন্ন সময়ে অংশ নিয়েছেন, নিচ্ছেন। তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভি দেওবন্দ ও সাহারানপুরের মতোই বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ও সুপ্রসিদ্ধ দিল্লির কাশিফুল উলুম নিজামুদ্দীন মাদরাসায় প্রায় দুই যুগ ধরে হাদিসের মহাগ্রন্থ আবু দাউদ শরিফ পড়িয়েছেন। গত তিন বছর ধরে ওই মাদরাসায় শায়খুল হাদিস হিসেবে বোখারি শরিফ পড়াচ্ছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এবং আরবজাহানসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম তার ইমামতিতে বহুবার জুমার নামাজ আদায় করেছেন। পৃথিবীর লাখো কোটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লির উদ্দেশে আখেরি মোনাজাতের পূর্বে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে টানা ১৮ বছর তিনি হেদায়েতি বয়ান দিয়েছেন। এমন একজন বিশ্ব স্বীকৃত, সুপরিচিত এবং সুমহান ব্যক্তিত্ব, বিশ্বজুড়ে যার কোটি কোটি ভক্ত-অনুসারী রয়েছেন, তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে মাওলানা আহমদ শফী সাহেব সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘আলেম নন, মৌলভী নয়-হাফেজও নয়’ বলে প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘তাবলিগের সাদপন্থীরা বাতিল। এরা এতেয়াতি না। আমি নাম দিলাম হাতাহাতি। এরা ৫ হাজার আলেম উলামাকে বাইরাইয়া মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সে বারবার ইহুদীদের কাছে যায়। তাদের সাথে আমাদের কোনো আপস নেই,’ ইত্যাদি।

প্রতিবাদ জানিয়ে ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গীর ময়দানে হেফাজতে ইসলাম ও পাকিস্তানপন্থী আলমী শূরাপন্থীরা তাবলিগ জামাতের নিয়মিত বাৎসরিক কর্মসূচি তিন চিল্লার সাথীদের জোড়ে অংশ নিতে আসা দু’জন সাথীকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করে। যদিও সেখানে তাদের কোনো ধরনের কর্মসূচি ছিল না। শুধু তাবলিগ জামাতের জোড়কে বানচাল করতে মাদরাসার হাজার হাজার কোমলমতি শিশু-কিশোরকে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক দেশীয় অস্ত্রসহ ময়দানে অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়, যা সে সময় সব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছিল।

চলতি বছরের গত ১৯ মে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী থানার একটি মসজিদে তাবলীগ জামাতকে আসতে দেয়ার জেরে স্থানীয় তাবলীগকর্মী আবদুর রহিম রাজনের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে হেফাজত সমর্থকরা।

Advertisement

‘মাওলানা আহমদ শফীর এ ধরনের বক্তব্যে পরিকল্পিতভাবে উস্কানি দিয়ে সমাজে দাঙ্গা, হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। মাওলানা আহমদ শফীর এ বক্তব্য পত্রিকায় প্রচার করার পাশাপাশি একই বক্তব্যের ভিডিও ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিশেষ করে তাবলিগ জামায়াতকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা যেখানে কমে আসছিল, তাকে উত্তপ্ত করে ধর্মীয় সংঘাত, গৃহবিবাদ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অশুভ পাঁয়তারা হচ্ছে বলেও আমি মনে করি, ‘ বলেন ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী।

জেইউ/এনডিএস/এমকেএইচ