এবারের ঈদুল আজহা সামনে রেখে পাবনার ২০ হাজার খামারে প্রায় সোয়া দুই লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোরবানির পশুর হাটে বেশি দামে বিক্রির জন্য অনেক খামারি বিশালাকৃতির গরু মোটাতাজা করেছেন। জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় বিশাল আকৃতির কয়েকটি গরু দৃষ্টি কেড়েছে উৎসুক জনতার।
Advertisement
এর মধ্যে চাটমোহরের মিনারুলের ৪২ মণ ওজনের ‘টাইগার’ নামের গরুর দাম হাঁকা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে ২২ লাখ টাকা দামও উঠেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, পাবনা জেলায় দুই হাজারের বেশি খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় সোয়া দুই লাখ পশু রয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেকেই কোরবানির জন্য পশু পালন করছেন। এদের মধ্যে চাটমোহর উপজেলার খামারি মিনারুল ইসলামের টাইগার নামের ৪২ মণ ওজনের গরু সবার দৃষ্টি কেড়েছে। দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা গরুটি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান মিনারুল। মিনারুলের টাইগার নিয়ে রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে গেছে এলাকায়।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছোট গুয়াখড়া গ্রামের মৃত আলহাজ আকুল প্রামাণিকের ছেলে মিনারুল ইসলাম (৪৪)। এক বছর চার মাস আগে প্রতিবেশী এক বন্ধুর ১৫-১৬ মণ ওজনের গরু কিনে দেশীয় পদ্ধতিতে নিজের খামারে এই প্রথমবারের মতো গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেন তিনি। গরুটির নাম রাখেন টাইগার। এটির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট আর উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট। ফিজিয়ান জাতের এ গরুটির ওজন এখন ৪২ মণ। কালো আর সাদা রঙ মিশ্রিত সুঠাম দেহের অধিকারী টাইগারকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে নানা বয়সের মানুষ।
Advertisement
মিনারুলের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা স্বামীকে গরু পালনে সহযোগিতা করেন। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও দুজন বিশাল এই গরুটির পরিচর্যা করেন। এদেরই একজন বারেক মোল্লা বলেন, আমার জীবনে এত বড় গরু কোনো দিন পালিনি। গরুটির স্বভাব খুবই ভালো। তবে বেশি লোকের ভিড় দেখলে রেগে যায়।
স্থানীয় গাজিউর রহমান বলেন, এমন বড় গরু আমরা আজো পাবনা জেলার মধ্য দেখিনি।
খামারি মিনারুলের ছোট ভাই শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন মানুষ দল বেঁধে গরুটি দেখতে আসে। তবে গরুটির ন্যায্যমূল্য পেলে আমার বড় ভাই আগামীতে গরু মোটাতাজাকরণে উৎসাহিত হবেন।
গরুর মালিক মো. মিনারুল ইসলাম বলেন, এক বছর চার মাস আগে এক লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়ে গরুটা প্রথম কিনি। তখন ওজন ছিল ১৫ থেকে ১৬ মণ। গরুটিকে দেশীয় খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। এখন গরুর ওজন ৪২ মণ ছাড়িয়ে গেছে। আমার গরু লম্বায় ৯ ফুট আর উচ্চতায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। আমি এখন এর দাম চেয়েছি ৩০ লাখ টাকা। এ দামে বিক্রি করতে পারলেই আমি খুশি।
Advertisement
মিনারুলের মতো জেলায় অনেক কৃষক ও খামারি কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণ করেছেন। ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের গরুর খামারি কোয়েল বিশ্বাস বলেন, গত বছর ৪০ লাখ টাকার গরু বিক্রি করেছিলাম। এবার ৫০ লাখ টাকা বিক্রি করতে চাই। তিনি এবার ২০টি গরু, ২০টি ছাগল ও ২০টি ভেড়া বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন।
লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের চর কামালপুরের মহিষের খামারি কর্নেল প্রামাণিক জানান, তার মহিষের বাথানে ১০০টি মহিষ রয়েছে। তিনি এবার একটি মহিষ বিক্রি করবেন। ৮ মণ ওজনের মহিষটি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাম উঠেছে। তিনি আশা করছেন মহিষটি দুই লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
এদিকে এবারে উত্তরবঙ্গের অনেক জেলায় বন্যার কারণে গোখাদ্যের সংকটসহ উপযুক্ত স্থানে পশু রাখা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে কোরবানির পশুর দাম কমে যেতে পারে বলে অনেক খামারি আশঙ্কা করছেন।
তবে পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন হোসেন জানান,পাবনা জেলায় এবারের কোরবানির উদ্দেশ্যে ২০ হাজারেরও অধিক খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ মিলিয়ে দুই লাখ ১৮ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ গরু ও মহিষ এবং এক লাখ ১৮ হাজার ছাগল ও ভেড়া। এটি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে পারবে।
তিনি জানান, এই পশুগুলো খামারিরা সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেছেন। এ পদ্ধতিতে কোনো ক্ষতিকারক রাসায়নিক বা ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি।
একে জামান/আরএআর/এমএস