পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র ৯ দিন বাকি। আগামী মঙ্গলবার থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে পুরোদমে বসবে কোরবানির পশুর হাট। তাই শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে গরুর প্রতি বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন খামারিরা। নিয়মিত খাবার সবুজ ঘাস, খড়, খৈল ও ভুসির পাশাপাশি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ খাওয়াচ্ছেন কেউ কেউ। তবে বিগত বছরের মতো এবারও খামারিদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় গরু। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসলে লোকসানের কারণে পথে বসতে হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার নয়টি উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১২ শতাধিক খামার রয়েছে। এসব খামারে এক লাখেরও বেশি গরু ও মহিষ পালন করছেন খামারিরা। দেশি জাতের পাশাপাশি বিদেশি জাতের গরু-মহিষও রয়েছে খামারগুলোতে। জেলাবাসী পশু কোরবানির জন্য খামারগুলোতে থাকা গরু-মহিষকে পর্যাপ্ত মনে করলেও ভারতীয় গরু আমদানির কারণে শঙ্কায় খামারিরা। পশুর হাটগুলোতে ভারতীয় গরু উঠলে বিগত বছরের মতো এবারও লোকসানে পড়ার কথা জানিয়েছেন খামারিরা।
ভারত সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কসবা ও বিজয়নগর উপজেলা। এ দিন উপজেলার মধ্যে কসবা উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু আমদানি করে থাকে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীরা। সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি করা হয় ভারতীয় গরু। আর দেশি গরুর চেয়ে দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ক্রেতাদেরও ঝোঁক থাকে ভারতীয় গরুর দিকেই। গত বছর শেষ মুহূর্তে পশুর হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর আধিক্যের কারণে লোকসান গুণতে হয়েছে অনেক খামারিকে। এবারও হাটে ভারতীয় গরু প্রবেশের শঙ্কায় ভুগছেন খামারিরা। আর এই শঙ্কা সত্যি হলে পথে বসতে হবে খামারিদের।
আশুগঞ্জ উপজেলার দগিরাসার গ্রামের খামারি শামীম ভূঁইয়া বলেন, আমি আমার খামারে দেশীয় জাতের গরু পালন করছি। গরু পালনে ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। গত বছর ভারতীয় গরুর কারণে আমার অনেক লোকসান হয়েছে। তবে এ বছর যদি ভারতীয় গরু না আসে তাহলে আমি যে গরুগুলো পালন করছি সেগুলোতে ভালেই লাভ হবে।
Advertisement
লালপুর গ্রামের খামারি আবুল খায়ের বলেন, দেশের খামারগুলোতে যে পরিমাণ গরু রয়েছে তা দিয়ে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে এবারও যদি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আমদানি করা হয় তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে। গত বছরও ভারতীয় গরুর কারণে অনেক লোকসান হয়েছে। সরকারের কাছে দাবি এবার যেন সীমান্ত দিয়ে কোনো ভারতীয় গরু ঢুকতে না দেয়া হয়। তাহলে আমরা গত বছরের লোকসান এবার পুষিয়ে নিতে পারব।
শামীম ভূঁইয়া ও আবুল খায়েরের মতো একই কথা জানিয়েছেন অন্য খামারিরা। তারাও বলছেন, ভারতীয় গরু ঠেকানো না গেলে লোকসানের কারণে এবার পথে বসতে হবে তাদের।
এদিকে পশুর হাটগুলোতে যেন কোনো অসুস্থ গরু ঢুকতে না পারে সেজন্য তৎপর প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্টরা। এ বছর এক লাখ পাঁচ হাজার ৯৬০টি পশুকে কোরবানিযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাপস কান্তি দত্ত জানান, গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রায় এক লাখ পশু কোরবানি করা হয়েছে। এ বছরও কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। খামারিদের মতো আমরাও ভারতীয় গরু আমদানির বিপক্ষে। আমরা চাই প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা যেন পশু বিক্রি করে লাভবান হন।
Advertisement
আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর/এমকেএইচ