নিজেদের ছোট একটি ফার্মেসি। সেই ফার্মেসির ফাঁকে ফাঁকে ঘুমিয়ে আছে বিড়াল। তাদের সবার রয়েছে আলাদা নাম। নামগুলোও মজার। প্লুটো, চকোপকো, স্যাম, স্যামি, সিমন, অবেরিন, জন, সানসা, ক্যাটালন ইত্যাদি। এদের সন্তানের মতো সেবা যত্ন করেন সাবিনা রহমান। তিনি যখনই নাম ধরে ডাকেন বিড়ালগুলো দৌড়ে চলে আসে সুবোধ বালকের মতো।
Advertisement
ফার্মেসি ছাড়াও তার বাসায় রয়েছে বেশ কিছু বিড়াল। সব মিলিয়ে যার সংখ্যা ৩৭টি। শুধু বিড়াল নয় সাবিনার বাসায় বিড়ালের পাশাপাশি রয়েছে ১০টি কুকুর। এছাড়াও আশপাশের একালায় ঘুরে প্রতিদিন রাস্তার কুকুর-বিড়ালগুলোর মধ্যে খাবার বিলি করেন সাবিনা।
এক সন্তানের মা সাবিনা রহমান স্বামী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বসবাস করেন রাজধানীর শেখেরটেক ১০ নম্বর এলাকায়। ওই এলাকার সবার কাছে প্রাণীপ্রেমী হিসেবে পরিচিত তিনি। আশপাশে যখনই কেউ কোনো কুকুর-বিড়ালকে অসুস্থ অবস্থায় বা আহত অবস্থায় দেখেন সবাই সাবিনাকে ফোন করেন। তিনি শত ব্যস্ততার মাঝেও তাদেরকে উদ্ধার করে আনেন।
সাবিনা চাকরি করতেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। কিন্তু এক বছর আগে সেগুনবাগিচায় বদলি হওয়াতে আর চাকরিটা ধরে রাখতে পারেননি। কারণ শেখেরটেক থেকে সেগুনবাগিচা যাওয়া-আসায় অনেক সময় লাগে। তার ওপর অফিসের এই দীর্ঘ সময়ে বাসার প্রাণীগুলা অভুক্ত থাকে। তাই চাকরিটাই ছেড়ে দেন।
Advertisement
জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে সাবিনা রহমান জানিয়েছেন নিজের নানান অভিজ্ঞতার কথা।
যশোরের মেয়ে সাবিনা রহমান ছোটবেলায় নিজের বাবা-মা এবং নানা-নানির কাছ থেকেই শিখেছেন কিভাবে প্রাণী ভালোবাসতে হয়। বাড়িতে প্রচুর কুকুর-বিড়াল পালন করতেন মা-বাবা।
সাবিনা বিয়ে করেছেন তার খালাতো ভাই রফিকুল ইসলামকে। ফলে বিয়ের পর কুকুর-বিড়াল পোষা নিয়ে তাদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। তবে আত্মীয়দের কারও কারও মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব দেখেছেন তারা। বর্তমানে স্বামীই তার এসব কাজে আর্থিক সাহায্য করে যাচ্ছেন। সাবিনা রহমানের একমাত্র মেয়ে সিনথিয়া তানজীম এমিবিএস পড়ছেন।
সাবিনা রহমান প্রতিদিন নিয়ম করে কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে বের হন। যেসব রাস্তায় চায়ের দোকান কম সেই রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কুকুরকে খাবার দেন তিনি। তার যুক্তি চায়ের দোকান থাকলে কিছু খাবার মেলে। কিন্তু যে রাস্তায় চায়ের দোকান নেই সেখানে খাবারের সংকট।
Advertisement
এর পাশাপাশি অসুস্থ কুকুর বিড়ালকে নিজের বাসায় নিয়ে সুস্থ করে তোলেন। কয়েকদিন আগে একটা ফোন আসে তার কাছে। বাসা থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটা কুকুরের বাচ্চা খুব অসুস্থ। সাবিনা ছুটে গেলেন সেখানে। গিয়ে দেখেন ৫/৬ মাসের একটি কুকুরের বাচ্চার গায়ে কে যেন গরম পানি ঢেলে দিয়েছে। এতে তার পিঠের সাদা মাংস উঠে গেছে। সাবিনা বাচ্চাটিকে নিজের বাসায় নিয়ে আসেন। ৮-৯ দিনের পরিচর্যায় বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে ওঠে। এভাবেই দিনের পর দিন নিজ বাসায় এবং বাসার বাইরের পশুদের সেবা করে যাচ্ছেন সাবিনা বেগম।
সাবিনা জানান, তার কাছে থাকা বিড়াল এবং কুকুরদের বেশির ভাগ অসুস্থ এবং আহত অবস্থায় ছিল যা তিনি বাসায় এনে সুস্থ করে তুলেছেন।
সাবিনা আফসোস করে বলেন, কুকুর বিড়ালকে একটু সহযোগিতার মানসিকতা খুব কম মানুষের আছে। উল্টো পারলে লাথি দেবে। লাঠি দিয়ে আঘাত করবে। মানুষ খাবার নষ্ট করে তবুও কুকুর বিড়ালকে দেয় না।
মায়ের দেখাদেখি সাবিনার মেয়েও বিভিন্ন উৎসবে পোশাক না কিনে কুকুর-বিড়ালের জন্য খাবার কেনেন। বাড়ি নিজেদের হওয়ায় কুকুর-বিড়াল নিয়ে কোনো ঝামেলাও হয় না।
সাবিনার মেয়ে সিনথিয়া তানজীম ঢাকা আর্মড ফোর্স মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়ছেন। থাকেন ক্যান্টনমেন্টের হোস্টেলে।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই জীবে দয়া করার ব্যাপারটি মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। প্রাণীকে ভালোবাসলে মানুষ উগ্র হবে না, অপরাধী হবে না। প্রাণীপ্রেম মানুষকে উদার করে।
এফএ/এমএস