# বাসাবাড়ির চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন পুল, অফিস আদালত ও নার্সারি# এডিস মশা কামড়ায় দিনের বেলা, থাকে চেয়ার টেবিল ও খাটের নীচে# এডিস মশা দিনে সর্বোচ্চ ১৫ ও গড়ে ৫ জনকে কামড়ায়
Advertisement
ডেঙ্গু এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি। রাজধানীসহ দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী কিম্বা ৮০ বছরের প্রবীণ সবার মুখে মুখে এখন ডেঙ্গুর কথা। এ মশা কেমন, কয়দিন বাঁচে, কোথায় থাকে, কখন কামড়ায়, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে মানুষের এখন ব্যাপক কৌতুহল।
জানা গেছে, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নির্মূল ও প্রতিরোধে ‘ত্রুটিপূর্ণ কার্যক্রম’ পরিচালনা করেছে সিটি কর্পোরেশন। এতদিন মনে করা হতো বাসাবাড়িতেই এডিস মশার জন্ম বেশি। তাই বাসাবাড়ির আশপাশেই মশার ওষুধ বেশি ছিটানোতে অধিক গুরুত্ব দেয়া হতো। কিন্তু বাসাবাড়ির চেয়ে অন্য স্থানে এডিস মশার প্রকোপ বেশি হয় বলে জানা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ভারতীয় নাগরিক বিএন নাগপাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে সভায় এডিস মশা দমনে করণীয়, বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থান ও মশা নির্মূলে করণীয় সম্পর্কে নতুন তথ্য তুলে ধরেন।
Advertisement
আরও পড়ুন : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ!
বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ওই বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে জানান, বাসাবাড়ির চেয়ে অন্য স্থান যেমন সরকারি পরিবহন পুল, থানার পরিত্যক্ত যানবাহন, নার্সারি, হাসপাতালের বাইরে ফেলে দেয়া কাঁচ ও প্লাস্টিকের বোতল, অফিস আদালতের বাইরে ফেলে থাকা আসবাবপত্র, বড় বড় নির্মানাধীন ভবনে পরিত্যক্ত গাড়ির চাকার টায়ার টিউবসহ অন্য ব্যবহার্য পরিত্যক্ত দ্রব্য সামগ্রীতে এডিস মশা বংশ বিস্তার ঘটায়। তাই বাসাবাড়ির চেয়ে এ সব জায়গায় মশক নিধন বেশি জরুরি জানিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন তিনি।
এডিস মশার চরিত্র
এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। এ মশা থাকে টেবিল, চেয়ার ও খাটের নীচে। তাই দেয়ালের মধ্যে মশার ওষুধ স্প্রে করলে মশা মরবে না, ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ করে বেশি করে মশার ওষুধ ছিটাতে হবে। বাইরে স্প্রে করলে ঘরের ভেতর কাজ করবে না। যে সব জায়গায় অনেকদিন ধরে পানি মজুদ থাকে (যেমন ওয়াটার ট্যাংকি) সে সব জায়গায় ‘টেমেফস’ নামক এক ধরনের লিকুইড ওষুধের বদলে দানা ব্যবহার করতে হবে। লিকুইড ছিটালে সেই ওষুধের কার্যকারিতা সাতদিন ও দানা ব্যবহার করলে ২১ দিন থাকে। সিটি কর্পোরেশন এতদিন দানা কিনে আনতে পারত না। দানা কেনার বাধা দূর হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন : আপনাদের ঠেলাঠেলিতে তো কিছুই হচ্ছে না : সচিবকে হাইকোর্ট
যেখানে দিনের বেলায় লোক সমাগম বেশি থাকে যেমন অফিস আদালত, হাটবাজার ও স্কুলে এডিস মশা বেশি কামড়ায়। যতক্ষণ পর্যন্ত পেট না ভরবে ততক্ষণ এটি কামড়াবে। একটা এডিস মশা সর্বোচ্চ ১৫ জনকে আর গড়ে পাঁচজনকে কামড়ায়। সব এডিস মশা এমনি ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে না। কিন্তু ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার কামড়ে কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে সেই ব্যক্তিকে কোনো ভাইরাসমুক্ত এডিস মশা কামড়ালে সেই মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমিত হবে। ওই মশা যে ডিম পাড়বে তা ফুটে বাচ্চা বের হলে শতকরা ৬০ ভাগের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস থাকবে। অন্য মশার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। কোনো ব্যক্তিকে কামড়ানোর পর সেই মশা আবার অন্য কাউকে কামড়ালে সেই ব্যক্তির ডেঙ্গু হতে পারে। এ কারণেই বর্তমান সময়ে বেশি লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।
একটি এডিস মশা ১০০টি ডিম পাড়ে। পুরুষ মশা ১০ দিন বাঁচে আর স্ত্রী মশা বাঁচে ৩০ দিন। সংখ্যায় সামান্য হলেও মশার বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, শুধুমাত্র মশার ওষুধ ছিটালেই হবে না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মশার ওষুধ জায়গামতো ছিটাতে হবে। আজকের বৈঠকে দুই সিটি মেয়রও উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বিশেষ বিমানে আসছে মশার ওষুধের নমুনা
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক হাজার ৭১২ রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত ১ জুলাই সারা দেশের হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭১ জন। সে তুলনায় ১ আগস্ট ভর্তিকৃত রোগের সংখ্যা বেড়েছে দশ গুণ।
শুধু সরকারি হিসাবেই চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ৫১৩ রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হিসাবে মৃত্যু ১০ জন বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে বলে জোর দাবি রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই ১৩ হাজার ৬৬১ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫ হাজার ৮৩৮ ডেঙ্গু রোগী।
এমইউ/এএইচ/এমএস