যশোরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১১৫ জন। এরমধ্যে ৫১ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় কিট এনএস-১ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। একই সঙ্গে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছে রোগীরা। কোরবানি ঈদ ঘিরে রোগীর চাপ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ঢাকা থেকে এলাকায় আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
Advertisement
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় ১১৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫১ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সঙ্গে অন্যান্য রোগীর চাপও বাড়ছে। ফলে অতিরিক্ত রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের বারান্দায় জায়গা হয়েছে অনেক রোগীর। এতে ভোগান্তি বেড়েছে সবার। সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পূর্ণ ফ্রি করা হয়েছে। কিন্তু এনএস-১ কিট সংকটে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাচ্ছে না।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের এখানে এনএস-১ কিট সংকট রয়েছে। সিভিল সার্জন অফিস থেকে ৪০টি কিট দেয়া হয়েছিল। সেগুলো শেষ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, জিজিএম, আইজিএম পরীক্ষা বিনামূল্যে করছে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তাদের প্রতিনিধি যশোর হাসপাতাল থেকে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করছে। পরে মেডিকেল কলেজে তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে সরকারি হাসপাতালের মত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও বাড়ছে রোগীর ভিড়। কিটসের দাম তিন-চারগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিড়ম্বনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
ইবনে সিনা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার যশোরের ডেপুটি ম্যানেজার ও অ্যাডমিন ইনচার্জ মফিজুর রহমান তারেক বলেন, রোগীর চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষার উপকরণ কিট সংকট দেখা দিয়েছে। কিট আমদানিকারকরা তিন-চারগুণ দাম বৃদ্ধি করেছে। সরকারের উচিত তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। তা না হলে উচ্চমূল্যে কিট কিনে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা কঠিন হবে। অনেক ক্লিনিক ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদেরও বাধ্য হতে হবে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (চলতি) ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরে কিটসের চাহিদা পাঠিয়েছিলাম। সেখানে সরবরাহ নেই। আমাদের স্টোর কিপার ফিরে এসেছে। তবে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ৪০টি কিটস পেয়েছি। সেটি দিয়ে কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, আজ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৭৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৫১জন রোগী চিকিৎসাধীন। বাকিরা ছাড়পত্র নিয়ে ফিরে গেছে। প্রতিদিন রোগীর চাপে জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে। ইচ্ছা করলেও ডেঙ্গু রোগী আলাদা রাখতে পারছি না। তবে আমরা ডেঙ্গু কর্ণার করার চেষ্টা করছি।
Advertisement
ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু রোগীর বেশিরভাগ ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরতদের কোরবানি ঈদে এলাকায় আসতে নিরুৎসাহিত করছি। এলাকায় ফিরলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়বে।
যশোরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ইমদাদুল হক রাজু বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনটি মনিটরিং টিম গঠন, একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। জেলায় এই পর্যন্ত ১১৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
আরএআর/এমকেএইচ