বগুড়া সদর উপজেলার শেখেরখোলা ইউনিয়নের মহিষবাথান এলাকায় পটলক্ষেত থেকে বিরল প্রজাতির একটি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তীর’ সাপটি উদ্ধার করে।
Advertisement
সংগঠনটির সভাপতি আরাফাত রহমান জানান, গতকাল বিকেলে মহিষবাথান এলাকায় একজন কৃষক তার পটলক্ষেতে কাজ করার সময় সাপটি দেখে এবং হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে সেটি অজগরের বাচ্চা মনে করে আটক করে রাখা হয়। এ খবর মুহূর্তের মধ্যেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ডালিম সহয়তা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তার পোস্ট দেখে শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন তীরের সদস্যরা সেখানে গিয়ে সাপটি উদ্ধার করে। এরপর তীরের পক্ষ থেকে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলমের সহায়তা নেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে সাপটি অজগরের বাচ্চা মনে করা হলেও সঠিক প্রজাতি কি তা নির্ণয়ে সন্ধিহান থাকায় বিভিন্ন সাপ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রজাতি নির্ণয়ের জন্য ছবি পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, সাপ গবেষক আবু সাঈদ এটিকে ‘Rough Scaled sand boa/common sand boa’ বলে উল্লেখ করেন। যার বাংলা নাম বালুবোয়া বা বালুবোরা। এটিকে বেবি পাইথনও বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম ‘Gongylophis conicus’। দেখতে অনেকটা অজগর সাপ ও রাসেল ভাইপার সাপের মত। লেজ মোটা ও ভোটাকৃতির। লম্বায় ২৩ ইঞ্চি। এটি একটি বিলুপ্ত প্রজাতি। যা অতীতে বাংলাদেশে দেখা যায়নি। সাধারণত ইউরোপ মধ্যপাচ্য, পাকিস্থান, ভারত শ্রীলঙ্কায় এই সাপ পাওয়া যায়। বালুময় নদী এলাকায় বাস করে। বাংলাদেশে এই বালুবোরা সাপের বিস্তৃতি নিয়ে কোনো রেকর্ড নেই।
আরাফাত রহমান বলেন, সাপটির পেটে দুই জায়গায় জখম রয়েছে। আহত হওয়ায় আপাতত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক ড. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফের পরামর্শ অনুসারে সাপটিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান এটিকে বাংলাদেশে বিরল প্রজাতির ৬ষ্ঠ রেকর্ড বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রাণিবিজ্ঞানী ড. আলী রেজা খান সুন্দরবন ও যমুনা নদী এলাকায় উপস্থিতির সম্ভবনার কথা জানিয়েছেন।
Advertisement
পরিবেশবাদী সংগঠন তীর’র উপদেষ্টা সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক আরিফুর রহমান বলেন, যতটুকু জানা যায় ‘common sand boa’ বাংলাদেশের একটি বিরল প্রজাতি। কীভাবে এটি ওই এলাকায় আসলো, নাকি পূর্ব থেকেই ছিল তা নিয়ে গবেষণা কিংবা গভীর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন ।
তীর’র সভাপতি আরাফাত রহমান বলেন, যেহেতু আমরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছি এবং আমাদের বিষয় সংশ্লিষ্ট তাই আমরা পরবর্তীতে ‘common sand boa’ নিয়ে কাজ করবো।
লিমন বাসার/আরএআর/পিআর
Advertisement