সন্দেহ নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তর্কাতীতভাবে দেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানও বলে থাকেন অনেকে। অন্তত ব্যাট হাতে তামিমের পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দেয় এ দাবীর পক্ষেই। কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে যেনো ঠিক ছন্দে নেই বাঁহাতি এ ওপেনার।
Advertisement
২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা তামিমের ক্যারিয়ারকে ভাগ করা যায়, বেশ কয়েকটি ভাগে। খেলার ধরন অনুযায়ী শুরুর দিকের তেড়েফুঁড়ে খেলা তামিম কিংবা বর্তমান সময়ের রয়ে-সয়ে খেলা তামিম। আবার পরিসংখ্যানের পাতাইয় চোখ রাখলে ২০০৭-২০১০ পর্যন্ত এক ধাপ, ২০১২ এশিয়া কাপ পর্যন্ত অন্যটি আবার ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত একটি এবং তার পরের সময়ে শেষ ধাপ।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকেই মূলত তামিম ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকেও। সে বিশ্বকাপের আগে তিনি ছিলেন কেবলই দেশসেরা ওপেনার। কিন্তু বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ থেকেই নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরায় পরিণত করেছেন তামিম। তবে নিজের ব্যাটে যে সুনাম তিনি কুড়িয়েছেন ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের প্রায় শেষ অবধি, তাই যেনো তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে চলতি বছরে এসে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিম ইকবালের সবশেষ সেঞ্চুরিটা এসেছে প্রায় বছরখানেক আগে। গতবছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজের শেষ ম্যাচে ১২৪ বলে খেলেছিলেন ১০৩ রানের ইনিংস। এরপর থেকে আর তিন অঙ্কে যাওয়া হয়নি তামিমের। সেই সেঞ্চুরির পর থেকে এখনও পর্যন্ত ২২ ইনিংসে ব্যাট করে মাত্র ২৯.৩৫ গড়ে ৫৮৭ রান করতে পেরেছেন তামিম। সেঞ্চুরি তো নেই, ফিফটি মাত্র ৫টি।
Advertisement
অথচ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ সেঞ্চুরি পর্যন্ত তামিমের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৪টি ফিফটির সঙ্গে ৭টি সেঞ্চুরি। এসময়ের মাঝে স্ট্রাইকরেট খানিক কম (৭৯.৬৭) হলেও ৬২.২৮ গড়ে সর্বমোট করেছিলেন ২১৮০ রান। সেই তামিমই এখন যেনো হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের শেষ চার ম্যাচ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচসহ টানা ছয় ম্যাচে বোল্ড হয়ে গড়েছেন লজ্জার এক রেকর্ড। লঙ্কা সফরের তিন ম্যাচে তার ইনিংসগুলো যথাক্রমে ৫ বলে ০, ৩১ বলে ১৯ এবং ৬ বলে ২। ব্যর্থতার চূড়ান্ত রূপটাই তিনি দেখে আসলেন এবারের শ্রীলঙ্কা সফর থেকে।
তাই স্বাভাবিকভাবেই চারিদিকে চলছে তামিমের সমালোচনা। কেউ কেউ আবার ওয়ানডেতে বাতিলের খাতায়ই ফেলে দিতে চাইছেন দেশসেরা এ ওপেনারকে। তবে দল এখনই ভাবছে না এমন কিছু, তা বলে দেয়াই যায়। এমনকি তামিমের কাছের বন্ধু সাকিব আল হাসানেরও বিশ্বাস নিজেকে সময় দিয়ে, যথাযথ বিশ্রাম নিয়ে ফিরলে তামিম আবারও নিজের সেরাটা দিয়ে খেলতে পারবেন।
আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১১টার সময় বনানীর বিদ্যা নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজে ডেঙ্গু বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে দেশের ক্রিকেটের ব্যাপারেও কথা বলেছেন সাকিব। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে দলের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ এবং বন্ধু তামিমের বর্তমান ফর্মের কথা।
Advertisement
তামিমের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কি-না? জানতে চাওয়া হলে সাকিব বলেন, ‘দেখুন একজন ক্রিকেটারের এমন সময় আসতেই পারে। এখন আমার মনে হয় যে ওর জন্য যেটা দরকার, খুব ভালো একটা বিশ্রাম নেয়া, নিজেকে রিকভার করা, ফ্রেশ হওয়া এবং আগের চেয়ে ভালোভাবে ফিরে আসা। আমি নিশ্চিত ও (তামিম) এটা করবে।’
এসময় নিজের ক্রিকেটে ফেরার ব্যাপারে সাকিব বলেন, ‘আগামীকাল (শুক্রবার) হজে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। তো তারপর হজ শেষে আসার পর আমাদের যে খেলা আছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ একটা সিরিজ আছে। দেখা যাক, আশা করছি যদি ফিট থাকি তাহলে খেলবো।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটা সাকিব ছুটি নিয়েছেন নিজ থেকেই। লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নে সোজাসাপটা স্বীকার করেছেন, যদি সাকিব থাকতেন তাহলে এত সহজে জয় পেতো না তার দল। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় সাকিবের কাছেও। তবে তিনি উত্তর দেন খানিক ঘুরিয়ে।
সাকিবের ভাষ্যে, ‘দেখুন বলা যায় না। ক্রিকেট এক বলের খেলা। হয়তো তিনটা ভালো বলে তিনদিন আমি আউট হয়ে যেতে পারতাম। তখন আমার পক্ষ থেকে কোনো অবদান রাখা হতো। আমি একটা জিনিস মনে করি, যখন কোনো খেলোয়াড় শারীরিক বা মানসিকভাবে ফিট না থাকে তখন তার খেলা ঠিক না। কারণ এতে কাজটা কঠিন হয়ে যায়। আমি মনে করি পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রেও এ জিনিসটা অনেক প্রভাব ফেলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা যখন পরিত্যক্ত হয়ে গেলে, আমরা খেলতে পারলাম না। তখন সবাই বলছিলো যে আমাদের নিশ্চিত দুই পয়েন্ট হাতছাড়া হয়ে গেল। কিন্তু এ সিরিজটা প্রমাণ করে দিল যে সে দুই পয়েন্ট নিশ্চিত ছিলো না। হয়তো জিততে পারতাম, আবার হারতেও পারতাম। এ সিরিজের কথা বললে অবশ্যই হতাশার। সিরিজ হারলেও, যদি একটা ম্যাচ জিততে পারতাম তাহলে হয়তো আত্মবিশ্বাসটা ঠিক থাকত। হয়তো এখন সময় এসেছে ভালোভাবে চিন্তা করে পুরো প্ল্যান করে আগামী ৩-৪ বছরের জন্য এগুনোর।’
এসএএস/এমকেএইচ