পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলায় এবার গবাদি পশুর ৩০টি হাট বসছে। এরমধ্যে ৯ উপজেলায় ২৯টি ও মহানগরে বসবে একটি হাট।
Advertisement
এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য এসব হাটে বিক্রির লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুত করা হয়েছে দুই লাখ গবাদী পশু। স্থানীয় খামারেই এই পশুর উৎপাদন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রাণি সম্পদ অধিদফতর। এবার চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
প্রাণি সম্পদ অধিদফতর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) সূত্র জানায়, নগরীর জোড়াগেটে কেসিসির আয়োজনে কোরবানির পশুর হাট শুরু হবে আগামী ৬ আগস্ট। এটি খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও মহানগরীর একমাত্র কোরবানির পশুর হাট। এ হাট চলবে ঈদের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। জেলার অন্যান্য হাটগুলোও সাজানো হচ্ছে গবাদি পশু বিক্রির জন্য। নিজেদের খাটালে গরু আনতে শুরু করেছেন ব্যাপারীরা।
চাহিদার তুলনায় স্থানীয় খামারগুলোতে পশু বেশি থাকায় এবার অন্য কোথাও থেকে খুলনা বিভাগে পশু আনতে হবে না বলে জানিয়েছে খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
Advertisement
তাদের তথ্য মতে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় প্রায় ৬ লাখ পশু কোরবানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য প্রস্তত রয়েছে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ৭ লাখ ৩২ হাজার পশু। খুলনা জেলায় এই সংখ্যা দুই লাখের বেশি। ফলে কোরবানির পশুর জন্য এই বিভাগকে কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে না। বরং নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে আরও ১ লাখ ২৫ হাজার পশু দেশের অন্য বিভাগে পাঠানো হবে।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদ আহমেদ খান বলেন, খুলনার ১০ জেলায় চাহিদা অনুযায়ী খামারগুলোয় পর্যাপ্ত পশু আছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এতে স্থানীয় খামারিরা লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, খুলনার ১০ জেলায় মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩৯ জন খামারি আছেন। এসব খামারে মোট ৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৪টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় গরু আছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৪৮টি, বলদ গরু ৩১ হাজার ১৫০টি, গাভি (বাচ্চা উৎপাদনে অক্ষম) ৩৩ হাজার ৩৭৯টি, মহিষ ১৯ হাজার ৩৩টি, ছাগল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৭০টি ও ভেড়া ৯ হাজার ৪৪৩টি। অন্যান্য গবাদি পশু আছে ৬২১টি। এগুলোও কোরবানির পশুর হাটে তোলা হবে।
খুলনা জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ বলেন, জেলার ৯ উপজেলায় মোট ১২টি স্থায়ী এবং ১৭টি অস্থায়ী হাট বসবে। এরমধ্যে রূপসায় ৪টি, ফুলতলায় ১টি, পাইকগাছায় ৫টি, ডুমুরিয়ায় ৫টি, তেরখাদায় ১টি, দিঘলিয়ায় ৪টি, দাকোপে ২টি, কয়রায় ৬টি ও বটিয়াঘাটায় ১টি পশুর হাট বসবে।
Advertisement
জেলার উল্লেখযোগ্য হাটগুলো হচ্ছে- রূপসার তালিমপুর ও পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড; ফুলতলা সদর; ডুমুরিয়ার খর্নিয়া, শাহাপুর, আঠারো মাইল ও চুকনগর; পাইকগাছার চাঁদখালী, গদাইপুর, কাছিকাটা ও জিরোপয়েন্ট; দাকোপের বাজুয়া, চালনা; কয়রার দেউলিয়া, গোবিন্দপুর, কালনা, ঘুগরাকাঠি, মান্দারবাড়িয়া ও হোগলা; দিঘলিয়ার এম এম মজিদ কলেজ মাঠ, জালাল উদ্দিন কলেজ মাঠ ও পথেরবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়; তেরখাদার ইখড়ি কাটেঙ্গা এবং বটিয়াঘাটার বাইনতলা।
এদিকে হাজার হাজার মানুষের সমাগমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হবে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে। তাই সবকিছু মাথায় রেখে এবার পশুর হাটে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার পরিকল্পনা করছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. আনিচুর রহমান বলেন, কোরবানির পশুর বাণিজ্য ঘিরে জালনোটের ব্যবহার রোধ ও হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পশুর হাটগুলোর নিরাপত্তায় আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। থাকবে জাল টাকা শনাক্তকারী মেশিন। সেই সঙ্গে পশুবাহী ট্রাকের চাঁদাবাজি ও পশুর হাটকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
আলমগীর হান্নান/এমএমজেড/জেআইএম