ঈদ বাজার ধরতে যশোরের পশু খামারগুলোতে প্রায় ৯০ হাজার গরু-ছাগল প্রস্তুত রয়েছে। তার মধ্যে গরু ২৬ সহস্রাধিক আর ছাগল ৬৩ হাজার। জেলার অধিকাংশ খামারি নিজেদের গচ্ছিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে কোরবানির বাজার ধরার জন্য এ পশু পালন করছেন। ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় এবার দেশি গরুর ভালো দাম পাবেন বলে প্রত্যাশা খামারিদের। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারাও খামারিদের ভালো লাভের আশা করছেন।যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিম দুই লাখ ৬০ হাজার টাকায় সাতটি এঁড়ে গরু কিনে পালন শুরু করেন প্রায় পাঁচ মাস আগে। বাড়ির আঙিনায় গোয়াল ঘরে তিনি গড়ে তুলেছেন পশু খামার। স্ত্রী রুমিজা বেগম ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম দিনরাত গরুগুলোর পরিচর্যা করেন। এবারের কোরবানি ঈদে তারা গরু বিক্রি করে লাখ টাকা লাভের আশা করছেন। মোহাম্মদ ইব্রাহিম জাগো নিউজকে জানান, আগে রিকশার ব্যবসা করতেন। কিন্তু অটোবাইক রাস্তায় নামায় রিকশার ব্যবসায় ধস নেমেছে। তাই রিকশার ব্যবসা বাদ দিয়ে গরু পালন শুরু করেন। দেশি গরু কোরবানিতে বেশি চাহিদা থাকে। এবার গরু বিক্রি করে কমপক্ষে এক লাখ টাকা লাভ হবে। যশোর জেলা প্রাণি সম্পদ দফতরের তথ্য মতে, এবারের কোরবানিতে জেলায় ২৫ হাজার গরুর চাহিদা রয়েছে। সেই হিসেবে জেলার আট উপজেলায় ১০ হাজার ১৭৩টি খামারে ২৬ হাজার ৯৬৮টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে প্রায় দুই হাজার গরু বেশি রয়েছে। এছাড়াও জেলায় ১৪ হাজার ৫৪১টি খামারে ৬৩ হাজার ৫৬৪টি ছাগল প্রস্তুত করেছে খামারিরা। আট উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায় দুই হাজার ৫১৮টি খামারে ৪হাজার ১৭৫টি গরু, নয় হাজার ৭৬৭টি খামারে ৩৯ হাজার ৬৯০টি ছাগল রয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলায় এক হাজার ৭২টি খামারে দুই হাজার ৯৬৮টি গরু, ৬২১টি খামারে এক হাজার ৭৫০টি ছাগল ও শার্শা উপজেলায় ৮১১টি খামারে ১হাজার ৬৫৯টি গরু, ৬০৮টি খামারে এক হাজার ৯৭৭টি ছাগল পালন করা হচ্ছে। মণিরামপুর উপজেলায় এক হাজার ৯৮৫টি খামারে পাঁচ হাজার ২১৬টি গরু, ৮১৬টি খামারে চার হাজার ৯৭৬টি ছাগল ও কেশবপুর উপজেলায় ৮২৭টি খামারে ২ হাজার ৪৮১টি গরু, ৫৯১টি খামারে ৩ হাজার ৫৪৬টি ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। অভয়নগর উপজেলায় এক হাজার ২০৩টি খামারে তিন হাজার ৬১০টি গরু, ৬১৫টি খামারে তিন হাজার ৬৯০টি ছাগল ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ৭৯৩টি খামারে তিন হাজার ৫৯টি গরু ও ৭০৮টি খামরে দুই হাজার ৬১৩টি ছাগল কোরবানির জন্য পালন করা হচ্ছে। এছাড়াও চৌগাছা উপজেলায় ৯৬৪টি খামারে তিন হাজার ৮০০ গরু ও ৮১৫টি খামারে পাঁচ হাজার ২৯৭টি ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।সদর উপজেলার শেখহাটি গ্রামের রুমিজা বেগম জাগো নিউজকে জানান, খৈল, ভুষি, খুদের (চাল ছোট ছোট অংশ) ভাত ও বিচালি খাইয়ে গরু মোটাতাজা করেছি। গরুকে প্রতিদিন গোসল করাই। গরুর কৃমির ওষুধ ছাড়া বাড়তি কোনো ওষুধ দেয়া হয়নি। বাড়িতে পালন করা গরুর মাংস মানুষ বেশি পছন্দ করেন। এবার গরুর দাম বেশি পাবো বলে আশা করছি। রুমিজা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জাগো নিউজকে বলেন, খামার করার জন্য কোনো ঋণ পাননি। নিজের পুঁজিতে স্বামী-স্ত্রী মিলে খামার করেছেন। লাভ হলে খামার আরও বড় করবেন বলে জানান। অভয়নগর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের খামার মালিক জাহিদ হাসান শেখ জানান, তার খামারে ১৫টি গরু রয়েছে কোরবানিতে বিক্রির উপযোগী। কিন্তু গরুর দাম নিয়ে সংশয়ে আছেন। তিনি বলেন, ভারতের গরু আমদানি বন্ধ থাকায় আমরা লাভের আশায় ছিলাম। কিন্তু এখন আবার নাকি গরু আসছে। ভারতের গরু আসা শুরু হলে দেশি গরুর দাম পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।যশোর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় প্রায় ২৫ হাজার খামারি গরু ও ছাগল পালন করছেন কোরবানির জন্য। এবার তারা ভালো দাম পাবেন বলে আশাবাদী। ভারত থেকে যদি স্থায়ীভাবে গরু আমদানি বন্ধ হয় তবে স্থানীয় খামারিরা আরও উদ্ধুব্ধ হবেন। ঘরে ঘরে কর্মসংস্থানও বাড়বে।তিনি আরও বলেন, এবারের কোরবানিতে গরু ছাগলের সঙ্কট হবে না। যশোর অঞ্চলে ভারতীয় গরু কোনো প্রভাব পড়ে না। এ জেলার মানুষ দেশি গরু ও ছাগলে কোরবানি দিয়ে থাকেন। জেলায় চাহিদার চেয়ে বেশি গরু-ছাগলের সরবরাহ রয়েছে। মিলন রহমান/এমজেড/পিআর
Advertisement