জাতীয়

শিশুমৃত্যু হ্রাসে এমডিজি সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হ্রাসে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের মোট ১৯৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ মাত্র ৬২টি দেশ ২৫ বছরে জাতিসংঘ নির্ধারিত দুই তৃতীয়াংশ শিশু মৃত্যুরোধে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়।১৯৯০ সালে বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে ৯১ জনের মৃত্যু হলেও ২০১৫ সালে এ সংখ্যা হ্রাস পেয়ে মাত্র ৪৩ জনে নেমে এসেছে। একই সময়ে বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার ১ কোটি ২৭ লাখ থেকে হ্রাস পেয়ে ৫৯ লাখ হয়েছে।৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানচেট ও ৯ সেপ্টেম্বর দি ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি ইসটিমেশন এর প্রতিবেদনে সাফল্যের এ তথ্য উঠে এসেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপী শতকরা ৫৩ ভাগ শিশুমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে। ফলে ৩৮ লাখ শিশুর অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এ সময়ে বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী আনুমানিক ২৩ কোটি ৬৩ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।জাতিসংঘের পক্ষে ডানজেন  ইউ (Danzhen You) ও তার সহযোগীদের করা গবেষণায় পরবর্তী ১৫ বছরে অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনার টার্গেট বেঁধে দেয়া হয়। মোট ৪৭টি দেশকে এ লক্ষ্যে কাজ  করতে হবে। তন্মধ্যে সাব-সাহারা আফ্রিকার ৩৪টি ও দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি দেশ-পাকিস্তান ও আফগানিস্থান রয়েছে।বিশ্বে দুটি অঞ্চল পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক এবং ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলো এমডিজি অর্জনে সফলতা লাভ করেছে। ৬২টি দেশের মধ্যে ২৪টি দেশই নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশ। এ সব দেশের মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়া, ইরিট্রিয়া, বাংলাদেশ, জর্জিয়া, এল সালভাদর, বলিভিয়া, মিসর, কম্বোডিয়া, নেপাল ও  ইয়েমেন।আইসিডিডিআরবি রোববার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আইসিডিডিআরবির পরিচালক,  সেন্টার ফর চাইল্ড অ্যান্ড এডোলেসেন্ট হেলথ, ড. শামস উল আরেফিন বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের মাধ্যমে গত ২৫ বছরে শিশুমৃত্যু হার শতকরা ৫ ভাগ করে হ্রাস পেয়েছে। এ সময়ে প্রতি হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে মৃত্যুহার ১৪৩ দশমিক ৭ ভাগ থেকে কমে ৩৭ দশমিক ৬ ভাগে দাঁড়ায়।বাংলাদেশ ডায়রিয়া প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও টিকাদানসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ সাফল্য অর্জন করেছে। নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, অশিক্ষা দূরীকরণ ও সর্বোপরি দারিদ্রতা দূরীকরণের ফলে পরিবারগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।নতুন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সালে মৃত্যুহার হ্রাসের শতকরা হার ছিল ১ দশমিক ৮ ভাগ। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৩ দশমিক ৯ ভাগে উন্নীত হয়।পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুহারে সাফল্য আসলেও এখনো নবজাতক (জন্মের পর থেকে পরবর্তী ২৮ দিন) মৃত্যুহার  অনেক বেশি। এখনও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহারের মোট সংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগ নবজাতক।  প্রসবকালীন জটিলতা, অপরিণত বয়সে জন্মগ্রণ, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ার কারণেই অধিক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শিশুর সাথে অপুষ্টির বিষয়টি জড়িত বলে ল্যানচেটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এমইউ/এআরএস/পিআর

Advertisement