অর্থনীতি

এক হাজার ডলার রেমিট্যান্সে বিনা প্রশ্নে মিলবে প্রণোদনা

বছরে এক হাজার ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্স দেশে পাঠালে বিনা প্রশ্নে প্রণোদনা পাবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সায় দিলেই তা বাস্তবায়ন হবে।

Advertisement

বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) জন্য মুদ্রানীতি (মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট) ঘোষণাকালে এসব কথা জানানো হয়।

মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর এস এম মুনিরুজ্জামান, আহমেদ জামাল, পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিআইএফইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজি হাসান, ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার এস কে সুর চৌধুরী, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন >> ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নেই, দাবি গভর্নরের

Advertisement

রেমিট্যান্স বিষয়ে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রণোদনার বিষয়ে একটি খড়সা নীতিমালা করে তা প্রস্তাব আকারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আমরা প্রস্তাবে বলেছি, কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি বছরে এক হাজার ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাঠালে তিনি সরাসরি প্রণোদনা পাবেন। এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে এটি কম-বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।

ছোট ছোট গ্রাহকদের জন্য সিলিং নির্ধারণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে আহমেদ জামাল বলেন, এটি প্রস্তাব আকারে দেয়া হয়েছে, সেটা হতে পারে ৫০০, ৬০০ বা সর্বোচ্চ এক হাজার ডলার। এর বেশি যারা রেমিট্যান্স পাঠাবেন তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডকুমেন্ট প্রদর্শনের প্রয়োজন হবে।

চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নীতিমালা না হওয়ায় এখনও এটি কার্যকর করতে পারেনি সরকার।

সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, ১ জুলাই থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাদের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হবে।

Advertisement

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ৩০ জুন সংসদে বাজেট পাস হয়েছে। ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। তবে এগুলো ফাংশনালের জন্য কিছু সময় লাগে। লিগ্যালওয়েতে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য চলতি অর্থবছর থেকেই ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হবে। এটা আমরা বাজেটে পাস করেছি। কিন্তু সিস্টেম এখনও ডেভেলপ করতে পারিনি। প্রণোদনা দেয়ার জন্য সিস্টেম আপডেট করতে আরও দু-তিন মাস সময় লাগবে।

আরও পড়ুন >> ৪ বছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৭২.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

তিনি বলেন, সামনে ঈদ, অনেকেই ধারণা করছেন যে, এখন দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে তারা প্রণোদনা পাবেন না, এটা কিন্তু ঠিক নয়। এটা যেহেতু বাজেটে পাস হয়েছে সেহেতু এখন রেমিট্যান্স পাঠালেও ২ শতাংশ প্রণোদনা ছয় মাস পর হলেও পাবেন। এখন পাঠালেও পাবেন, পরে পাঠালেও পাবেন। অর্থাৎ ১ জুলাই থেকেই যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তারাই ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। এক্ষেত্রে সিস্টেমটা ডেভেলপমেন্ট করতে আমরা দ্রুত কাজ করে যাচ্ছি।

গভর্নর বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট) সংরক্ষণ এবং বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর (স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও) রাখার পর চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে ৮৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। তার মানে, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট নেই।’

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি ৫.৫০ শতাংশ পরিমিত রেখে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত ঋণপ্রবাহের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি আগের মতো সতর্কভাবে সংকুলানমুখী রয়েছে বলে জানান গভর্নর ফজলে কবির।

নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর (জুলাই-জুন) পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।

আরও পড়ুন >> ৫ বছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রক্ষেপণ ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু গত জুন শেষে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি গত অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দু’বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। ছয় মাস অন্তর এ মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে প্রণয়ন করা হয়। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রার সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য আলাদাভাবে মুদ্রানীতি ঘোষণার বিশেষ কোনো তাৎপর্য বহন করে না। তাই এখন থেকে বছরে দুবারের পরিবর্তে একবারই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।

আরও পড়ুন >> বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জনে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক- দুদিকেই ‘কিছু ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা’ রয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ফলে এবং বন্যায় ফসলহানির কারণে বাজারদরে চাপ সৃষ্টি হলে মূল্যস্ফীতি সরকারের প্রত্যাশিত সীমায় বেঁধে রাখা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর সমন্বিত প্রভাব পুরো অর্থবছরে কেমন দাঁড়াবে তার ধারণা পেতে কিছুটা সময় লাগবে।’ আবার বিশ্ববাণিজ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রপন্থীদের চলমান দ্বন্দ্ব এবং ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তাকে বৈদেশিক খাতের সম্ভাব্য ঝুঁকি বলে মনে করা হচ্ছে।

অবশ্য আন্তর্জাতিক ওই বিষয়গুলোকে ‘ঝুঁকি’ না বলে ‘অনিশ্চয়তা’ বলতে চান গভর্নর ফজলে কবির।

এসআই/এমএআর/পিআর