যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির ১নং ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
Advertisement
একই সঙ্গে এ ঘটনায় সম্ভাব্য জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা করে বক্তব্য শুনেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদেরও বক্তব্য শুনেছেন তারা। বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহনেওয়াজ দিলরুবা খান কুমিল্লা ফেরিযোগে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে আসেন।
তার সঙ্গে ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য শাহ মো. হাবিবুর রহমান। প্রথমে তারা মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলামের বক্তব্য শোনেন। তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কি বলেছেন তা জানানো হয়নি।
Advertisement
আরও পড়ুন : সচিবের অপেক্ষায় ৩ ঘণ্টায় ছাড়েনি ফেরি, অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর মৃত্যু
পরে ঘটনার সঙ্গে সম্ভাব্য জড়িত বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম মিয়া, উচ্চমান সহকারী ফিরোজ আলম ও টিএসআই নজরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এরপর মাদারীপুরে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের বক্তব্য শোনেন তারা। পাশাপাশি ফেরিঘাট এলাকার বিভিন্ন দোকানদার ও ঘটনার দিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব শাহনেওয়াজ দিলরুবা খান বলেন, তদন্তের শুরুতে ঘটনাস্থল ও ঘটনার রাতে ঘাটে কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলছি। ঘটনার সঙ্গে সম্ভাব্য জড়িতদের তালিকা করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও তদন্ত হবে। তদন্ত কমিটি নিহত তিতাস ঘোষের বাড়িতে গিয়ে তার স্বজনদের বক্তব্য শুনবে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
Advertisement
আরও পড়ুন : যার ফোনে ফেরি ছাড়া হয়নি তার নির্দেশেই তদন্ত কমিটি
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১নং ফেরিঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছিল সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুলছাত্র তিতাসকে বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর রাত ১১টার দিকে ফেরিতে ওঠে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু ততক্ষণে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় ওই স্কুলছাত্র।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুরের জন্য ফেরি ছাড়তে দেরি হওয়ার কারণে অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় সোমবার তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
নিহত তিতাস ঘোষ (১২) নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পৌর এলাকার মৃত তাপস ঘোষের ছেলে। কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল তিতাস।
আরও পড়ুন : সচিবের অপেক্ষায় ফেরি : অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিরিক্ত সচিবের গাড়ির অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরিঘাটে থাকায় প্রাণ গেল অ্যাম্বুলেন্সের রোগীর। ওই দিন আশপাশের লোকজনের অনুরোধের পরও কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া হয়নি। অথচ রাত ৮টায় কাঁঠালবাড়ি ১নং ফেরিঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন কুমিল্লা নামের ফেরিটি ঘাটেই ছিল। কিন্তু ওই কর্মকর্তার গাড়ি না আসা পর্যন্ত ফেরি ছাড়তে রাজি হয়নি ঘাট কর্তৃপক্ষ। কারণ ওই কর্মকর্তার ভিআইপি গাড়ি যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক।
এ অবস্থায় রোগীর স্বজনরা ফোন করেন জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে। সাহায্য চান ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু কারও কোনো অনুরোধই রাখেনি ঘাট কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগানো সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি ঘাটে আসার পর রাত ১১টার দিকে ফেরি ছাড়া হয়। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় স্কুলছাত্র তিতাসের।
এ কে এম নাসিরুল হক/এএম/এমএস