‘নাগরিকত্ব নিশ্চিত না করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অনিরাপদ হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন রোহিঙ্গা নেতারা। তারা জানান, শরণার্থী জীবন দীর্ঘ হোক- এটা তারা চান না। আবার অনিরাপদ হিসেবে ফিরতেও চান না।
Advertisement
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা নেতাদের আকুল আবেদন, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা।
আরও পড়ুন >> প্রত্যাবাসনে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর
মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। এ সময় রোহিঙ্গা নেতারা জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এমন আহ্বান জানান।
Advertisement
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে শরণার্থী ক্যাম্প-৪ এর এক্সটেনশন এলাকার সাইড ম্যানেজমেন্ট অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চার নারীসহ ১২ রোহিঙ্গার নেতৃত্ব দেন ক্যাম্প- ৪ এর বাসিন্দা মাস্টার এনামুল হাসান। তিনি জানান, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো তাদের কাছে জানতে চান, আগামীকাল প্রত্যাবাসন করা হলে তারা চলে যাবেন কি-না?
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ অন্যরা
এর উত্তরে তারা (রোহিঙ্গারা) বলেছেন, মিয়ানমার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই তারা ফিরে যেতে প্রস্তুত। এটা না হলে তারা (মিয়ানমার) ফিরিয়ে নিয়ে আবারও ২০১৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারে। তাই, সম্মান নিয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা না পেলে কেউ ফিরে যাবে না।
তাদের দলের নারী সদস্য ছুরা খাতুন, হামিদা খাতুন, মনোয়ারা ও জুবায়রা বলেন, আমরা আমাদের ওপর চালানো পাশবিক নির্যাতনের বিচার পেতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছি।
Advertisement
আরও পড়ুন >> দেশে যেতে রোহিঙ্গাদের টালবাহানা, উসকানি দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা
‘জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের (রোহিঙ্গা) কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একীভূত হয়ে সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে কাজ করছে জাপান’- বলেন ওই চার নারী ও মাস্টার এনামুল হাসান।
এরপর ক্যাম্পে নিয়োজিত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। তিনি সবার কথা শোনার পর বলেন, এত রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের জন্য বিশাল চাপ। এ চাপ সামলাতে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব অব্যাহত রাখা জরুরি। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে এবং দ্রুততম সময়ে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনে সবাইকে কাজ করতে হবে।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ অন্যরা
পরিদর্শনকালে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি, ইউএনএইচসিআর-এর কক্সবাজারের প্রধান মারিন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন বায়েজীদ, উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী বিষয়ক ডেস্কের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন >> আমরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত : মিন্ট থোয়ে
এর আগে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো সে দেশের ঊর্ধ্বতন এক প্রতিনিধি দলসহ জাপানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে আরআরআরসি মো. আবুল কালাম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ উন্নয়ন) সরওয়ার কামাল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক, জেলা প্রশাসনের এনডিসি প্রমুখ তাদের স্বাগত জানান। জাপানের প্রতিনিধি দলটি বিকেলে কক্সবাজার ত্যাগ করে।
সায়ীদ আলমগীর/এমএআর/এমএস