দেশজুড়ে

প্রাণের ত্রাণে প্রাণ ফিরেছে তিস্তা পাড়ে

তিস্তা পাড়ে প্রতি বছর বন্যাদুর্গত পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণে পরম আপন হয়ে উঠেছে জাগো নিউজ এবং দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

Advertisement

তিন বছর ধরে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এর ত্রাণসামগ্রী তিস্তা পাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানভাসি মানুষের হাতে পৌঁছায় খুশি তারা। একই সঙ্গে প্রাণ এবং জাগো নিউজের প্রশংসা এখন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের মুখে মুখে।

প্রতি বছর তিস্তায় পানি বাড়লেই মানুষের মাঝে ত্রাণের জন্য শুরু হয় হাহাকার। এমন সংকটময় মুহূর্তে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে তিস্তা পাড়ে ছুটে আসে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এ অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রাণের ত্রাণে প্রাণ ফিরেছে তিস্তা পাড়ে।

গত শুক্রবার সকালে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এর সহায়তায় তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম টিম।

Advertisement

ওই দিন আগে থেকেই শত শত বানভাসি মানুষ অপেক্ষা করছিল গডিমারি ইউনিয়নের তিস্তা ব্যারাজের কন্ট্রোল রুমের সামনে। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ১০টায় শুরু হয় ত্রাণ বিতরণ।

আরও পড়ুন > বানভাসি মানুষের পাশে জাগো নিউজ ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

বন্যার্তদের জন্য এবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর সহযোগিতায় প্রায় ২৫ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ছিল- চাল, ডাল, মুড়ি, পানি, বিস্কুট, স্যালাইনসহ নানা খাদ্যসামগ্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এবার লালমনিরহাট জেলায় তিস্তা, ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল লক্ষাধিক মানুষ। এরই মধ্যে নদীর পানি কমে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। এ অবস্থায় বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয় জাগো নিউজ এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গত ২৬ জুলাই শুক্রবার সকালে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারাজে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পৌঁছায় জাগো নিউজ টিম।

Advertisement

আরও পড়ুন > এবার কুড়িগ্রামের বানভাসিদের পাশে জাগো নিউজ ও প্রাণ-আরএফএল

হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী, ছোয়ানি এলাকার শত শত মানুষ অপেক্ষায় ছিল ত্রাণের জন্য। সেখানে অপেক্ষমাণ দোয়ানী এলাকার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই বানভাসি মানুষ, খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। দেশের শেষ প্রান্ত হওয়ায় আমাদের এখানে কেউই ত্রাণ নিয়ে আসে না। প্রতিটি পানিবন্দি মানুষ চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকি সামান্য ত্রাণের জন্য। এ অবস্থায় দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগিতায় জাগো নিউজের এ উদ্যোগে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সবসময় তাদের জন্য দোয়া করব, কারণ আমাদের বিপদে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে।’

জাগো নিউজের এবারের ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম দলে ছিলেন জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিয়াউল হক, জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ, ওয়েব ইনচার্জ হাসিবুল হাসান আশিক, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফয়সাল খান ও নিজস্ব আলোকচিত্রী মাহবুব আলম।

আরও পড়ুন > অন্তত ৩ দিন ৩ বেলা খেতে পারবে যমুনা চরের ২ হাজার পরিবার

এরই মধ্যে রোববার বিকেলে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেব মোড় এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন।

তিনি বলেন, তিস্তা পাড়ের জন্য একটি স্থায়ী বাঁধের চেষ্টা করছি। বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোকে ত্রাণসামগ্রী দেয়ায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও জাগো নিউজ পরিবারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই আমি।

হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ইউনিয়নের দক্ষিণ সিন্দুর্ণা এলাকায় গত শুক্রবার বিকেলে জাগো নিউজের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন ‘সবুজ পৃথিবী বাঁচাও’ সামাজিক সংগঠনের পরিচালক আ. রাজ্জাক।

২৭ জুলাই শনিবার উপজেলা সিংঙ্গীমারী ইউনিয়নের ধুবণী গ্রামের শেখ রাসেল ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আবু সাঈদ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। একই দিন উপজেলা বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে তিস্তা উন্নয়ন সংস্থা পরিচালনা কমিটি। পাশাপাশি ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন জাগো নিউজের লালমনিরহাট প্রতিনিধি রবিউল হাসান। লালমনিরহাটে ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

আরও পড়ুন > গাইবান্ধায় বানভাসি মানুষের পাশে জাগো নিউজ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

ত্রাণসামগ্রী পেয়ে উপজেলার গড্ডিমারী তালেন মোড় এলাকার কলিমন নেছা (৪৫) বলেন, কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি আমরা। কোনো খাবার নেই ঘরে। অবশেষে প্রাণের খাবার পেয়ে আমার পুরো পরিবার খুশি।

তিস্তা পাড়ের রহমত আলী (৫০) বলেন, প্রাণের খাবার পেয়ে প্রাণটা ভরে গেল। খাবারগুলো সন্তানদের নিয়ে দুদিন খেতে পারব। আল্লাহ- প্রাণ কোম্পানির ভালো করুক।

ত্রাণসামগ্রী পেয়ে তিস্তা পাড়ের আজিম বিবি বলেন, ‘প্রাণের খাবার পাইলাম বাবা। তিন-চারদিন কেটে যাবে এসব খাবারে। তবে আমাগো একটা স্থায়ী বাঁধ দরকার। বাঁধ দিলে ঘরে আর পানি উঠবে না।’

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানিপ্রবাহ বর্তমানে খুবই কম। পানি বৃদ্ধি পেলে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হবে।

রবিউল হাসান/এএম/জেআইএম