মতামত

শুরু করতেই ১০ বছর, শেষ হবে কবে?

অবশেষে দীর্ঘ ১০ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হল। বারবার তারিখ পেছানোর পর গতকাল রোববার সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৩২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করেন। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার অনেক আগেই শেষ করা উচিত ছিল। কিন্তু বিচার হবে তো দূরের কথা। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ১০ বছর ধরে বিচার কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। বিচার শুরু হয়েছে এটা স্বস্তির বিষয়, এখন যত দ্রুত এটি শেষ করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় ততই মঙ্গল।  ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। একজন সফল অর্থমন্ত্রী, দক্ষ আমলা এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। এই রকম একজন অজাতশত্রু ব্যক্তিকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে সে সময়। তাঁর হত্যার বিচারের জন্য শুধু কিবরিয়া পরিবারই নয় সাধারণ মানুষও নেমে আসে রাস্তায়। শাহ এ এম এস কিবরিয়ার সহধর্মীনি আসমা কিবরিয়ার ‘শান্তির সপক্ষে নীলিমা’ কর্মসূচিতে সাড়া দিতে অনেকেই শামিল হন। কিন্তু এরপরও বিচার কাজ শুরু হয়নি।তিন দফা তদন্তের পর হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল গত বছরের ২১ ডিসেম্বর আরিফুল হক, গউছ, হারিছ চৌধুরীসহ ১১ জনের নাম যোগ করে মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর আরিফুল ও গউছ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তা নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠান। হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহ মামলাটি বিচারের জন্য গত ১১ জুন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন। নানা কারণেই কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের ব্যক্তিদের হত্যার বিচারও যদি না হয় কিংবা হতে দেরি হয় সেক্ষেত্রে সমাজে এর নেতিবচাক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে অপরাধীরা এই বার্তা পায় যে অপরাধ করেও পার পাওয়া যায়। কিন্তু একটি সভ্য সমাজে এটি চলতে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে সময়মত বিচার হওয়াটাই অত্যন্ত জরুরি। কথায় আছে-‘জাস্টিস ডিলেইড জাস্টিস ডিনাইড’। তাই শুধু বিচার হওয়া নয়, সময়মত বিচার হওয়াটাও সমান জরুরি। আমাদের দেশে রাজনৈতিক মোড়কে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার বিচার পাওয়াটা সত্যি দুষ্কর হয়ে যায়। কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রেও জটিলতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। কেন ১০ বছরেও এ ধরনের আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ডের বিচারই শুরু করা গেল না- সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। স্বস্তির বিষয় যে অবশেষে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মামলার ৩২ আসামির মধ্যে ১৪ জন কারাগারে, আটজন জামিনে এবং ১০ জন পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামীদেরও গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। মামলাটি পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। দ্রুত বিচার আদালতের মামলা যাতে দ্রুতই শেষ হয় সেটিই মানুষজন দেখতে চায়।এইচআর/এমএস

Advertisement